পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে আজ রোববার (১৬ মার্চ) থেকে প্রতিটি যাত্রীবাহী লঞ্চে চারজন করে আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আনসার সদস্যদের ভাতা বহন করবে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।
নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও যাত্রী হয়রানি রোধে নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ এবং কোস্ট গার্ড ইতোমধ্যেই নিয়মিত ও বিশেষ টহল জোরদার করেছে। নারায়ণগঞ্জ, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল-ভোলা নৌপথসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।
গত ৬ মার্চ নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টদের এক বৈঠকে ঈদযাত্রায় যাত্রী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে আহ্বান জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে লঞ্চে অনুমোদিত ভাড়ার বেশি আদায় বা অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালকে হকারমুক্ত রাখতে আনসার, কমিউনিটি পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদরঘাটমুখি সড়ক যানজট ও হকারমুক্ত রাখার বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সরকার জানায়, প্রতিটি ঘাটে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হবে এবং প্রতিটি নদীবন্দর, টার্মিনাল ও ঘাটে রোস্টার ডিউটি কার্যকর থাকবে।
ঢাকা নদী বন্দরের ওয়াচ টাওয়ার থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। যাত্রীদের সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- রাতের বেলায় স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা
- দিনে স্পিডবোট যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক
- ১৫ রমজান থেকে ঈদের পর পাঁচ দিন বাল্কহেড চলাচল ও বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ
- ঘাট ছাড়া নদী থেকে যাত্রী ওঠানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ
ঈদের তিন দিন আগে ও পরে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ফেরিতে পারাপার করতে পারবে। অন্য ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের পারাপার সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
সাতটি ফেরিঘাটে ৪৬টি ফেরি সচল রাখা হবে যাতে যানজটের আশঙ্কা কমানো যায় এবং যাত্রীসেবা নিশ্চিত হয়।
বিআইডব্লিউটিএ ঈদযাত্রা কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও হটলাইন চালু রাখবে। নৌপথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান চালাতে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত থাকবে। পাশাপাশি ভাসমান ফায়ার স্টেশনগুলোতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যদের মোতায়েন রাখা হবে।
লঞ্চ বা ফেরির কর্মীদের পরিচয়পত্র ও নির্ধারিত পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা বার্তা ও নৌপথসংক্রান্ত নোটিশ যাত্রীদের অবগতির জন্য টার্মিনালে প্রচার করা হবে।
লঞ্চে যাত্রী ওঠানোর জন্য অতিরিক্ত প্রচারণা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। কর্তৃপক্ষের মতে, এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে এবারের ঈদযাত্রা হবে নিরাপদ, আরামদায়ক ও নির্বিঘ্ন।