বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে নিয়ে একটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় অনলাইন পোর্টাল ‘নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া’। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে ওই বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার ‘নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্পর্কে একাধিক মিথ্যা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ তোলা হয়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যাডভাইজার মিটস টপ লস্কর-ই-তাইয়েবার অপারেটিভ পোস্ট জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর অ্যাটাক’। এতে দাবি করা হয়, কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর লস্কর-ই-তাইয়েবার এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বৈঠক হয়েছে। অথচ এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও কল্পনাভিত্তিক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রতিবেদনে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম একটি বৈধ ইসলামি সংগঠন। এটি বাংলাদেশের আলেমদের একটি স্বীকৃত প্ল্যাটফর্ম। যাঁদের নিয়ে প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে, তাঁরা কেউ কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু হেফাজত কর্মী মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার শিকার হন। সেই ঘটনার ন্যায়বিচারের জন্য হেফাজতের একটি প্রতিনিধিদল আসিফ নজরুলের সঙ্গে দেখা করে। এই বৈঠকটি তাঁর দায়িত্বের অংশ হিসেবেই অনুষ্ঠিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া যে তারিখে বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছে, প্রকৃতপক্ষে সেই বৈঠকটি তিন দিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আলোচনা হয় কেবল মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে। প্রতিনিধি দল মামলার তালিকা হস্তান্তর করে। বৈঠকের শেষে অনুরোধে একটি ছবি তোলা হয়। এটি এমন বৈঠকে স্বাভাবিক একটি বিষয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তাঁরা ঢাকায় বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করেন। এটি তাঁদের রাজনৈতিক বৈধতা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগকে তুলে ধরে।
হেফাজতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থাগুলো আগের সরকারের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছে। এসব সংস্থা হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাও নথিভুক্ত করেছে। তাদের প্রতিবেদনগুলো প্রমাণ করে, এই মামলাগুলোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল। ফলে বর্তমান সরকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এখানেই স্পষ্ট।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, আসিফ নজরুল তাঁর ফেসবুক পেজে ভারতের নেতাদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, সেটি আসলে একজন ভারতীয় নাগরিকের লেখা পোস্ট ছিল। তিনি ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। আসিফ নজরুল সেই পোস্টটি শেয়ার করেন এবং পেহেলগামের হামলার নিন্দা জানান। পরে বিভ্রান্তির আশঙ্কায় তিনি পোস্টটি স্বেচ্ছায় মুছে ফেলেন।
আইন মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলে, এ ধরনের প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। এতে সত্য ও দায়িত্ববোধের অভাব রয়েছে। সব গণমাধ্যমকে আহ্বান জানানো হয় যেন তারা সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্য যাচাই করে এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা অনুসরণ করে।
বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়, উপদেষ্টা আসিফ নজরুল পেহেলগামের হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে তিনি হামলাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।