সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দৈনিকভিত্তিক সাময়িক শ্রমিকদের জন্য এসেছে আশার খবর। সরকার তাদের দৈনিক মজুরি ১৫০ থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে, যা আগামী ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
নতুন এই মজুরি কাঠামো সরকারের মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই সিদ্ধান্তটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঘোষিত ‘দৈনিক ভিত্তিক সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা, ২০২৫’-এর আলোকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এই নিয়োগগুলো হবে অস্থায়ী, জরুরি এবং সম্পূর্ণ দৈনিক মজুরি ভিত্তিক।
নতুন মজুরি অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নিয়মিত দক্ষ এবং অনিয়মিত অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা, যেখানে এতদিন নিয়মিত দক্ষ শ্রমিক পেতেন ৬০০ টাকা এবং অনিয়মিত অদক্ষ শ্রমিক পেতেন ৫৭৫ টাকা। ফলে এই এলাকায় মজুরি বাড়ছে ২০০ থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত।
বিভাগীয় শহর ও অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৬০০ ও ৫৫০ টাকা। এই ক্ষেত্রে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ টাকা, যেখানে আগের হার ছিল ৫৫০ ও ৫০০ টাকা। ফলে এখানেও একই পরিমাণ বৃদ্ধি দেখা গেছে।
তবে এই মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তও যুক্ত করা হয়েছে। যেমন, নিয়োগ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে, শ্রমিকের সংখ্যা অনুমোদিত হতে হবে, এবং বাজেট বরাদ্দের মধ্যেই মজুরি প্রদান করতে হবে। মাসিক ভিত্তিতে এই মজুরি হারে কোনো নিয়োগ দেওয়া যাবে না। যদি কোনো অনিয়ম ঘটে, তার দায় থাকবে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষের ওপর। পাশাপাশি আর্থিক বিধি-বিধান কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, এই সাময়িক শ্রমিকরা কোনো পদ সৃষ্টি ছাড়াই অস্থায়ীভাবে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ পাবেন, এবং তাদের কর্মকাল এক মাসে ২২ দিনের বেশি হবে না। এই নিয়োগ শুধুমাত্র এমন কাজের ক্ষেত্রে দেওয়া যাবে, যা জরুরি এবং প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান জনবল দিয়ে সম্পাদন সম্ভব নয়। জাতীয় বেতন স্কেলভুক্ত পদ, শূন্য পদ অথবা আউটসোর্সিংয়ের আওতাভুক্ত সেবার জন্য এ ধরনের নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
এ নীতিমালার আওতায় জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫৮ বছরের মধ্যে এবং যাঁরা মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম, তারা সাময়িক শ্রমিক হিসেবে নিয়োগের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এই সিদ্ধান্ত দেশের অসংখ্য দিনমজুর ও অস্থায়ী শ্রমিকের জন্য বড় স্বস্তির বার্তা হয়ে এসেছে। মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা কিছুটা বাড়বে এবং সরকারি জরুরি কাজগুলোও অধিকতর গতিশীলভাবে সম্পাদিত হবে বলে আশা করা যায়।