করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস চালু হয়। এই পদক্ষেপ শিক্ষার মানে বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। শিক্ষার ভিত মজবুত না হলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। এই প্রতিবেদনে অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রভাব এবং সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
২০২০ সালে করোনার কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস চালু হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী এই ব্যবস্থায় পরীক্ষা দিয়েছে। তবে এটি শিক্ষার মানের জন্য ক্ষতিকর।
অটোপাসের কারণে শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে অনেকে মাধ্যমিক স্তরের বিষয় বুঝতে অসুবিধা পায়। শিক্ষকদের পুরোনো বিষয় নতুন করে শেখাতে হচ্ছে। স্নাতক পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থী ফেল করছে। পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা দেওয়া ব্যাচের তুলনায় এদের ফলাফলও খারাপ।
অটোপাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সমাজে ‘অটোপাস জেনারেশন’ বলে হেয় করা হয়। এটি তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি করছে। পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বৈষম্যমূলক। মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন না হওয়ায় শিক্ষার মান নিম্নমুখী।
শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা দেশের দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাধা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শক্ত ভিত না হলে আত্মবিশ্বাসী ও কর্মক্ষম নাগরিক গড়ে ওঠা কঠিন। অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ভবিষ্যতে স্নাতকদের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এটি দেশের অগ্রগতির পথে বড় বাধা।
২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় নতুন জটিলতা দেখা দেয়। সাড়ে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ৩০ জুন শুরু হয়। কোটা সংস্কার ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা কয়েক দফা স্থগিত হয়। বিগত সরকারের পতনের পর নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষা বোর্ড ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্থগিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এটি অটোপাসের প্রবণতাকে আরো উসকে দিয়েছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শিক্ষার ভিত নষ্ট করছে। শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞানের ঘাটতি তাদের উচ্চ শিক্ষা ও চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষকরা জানান, ক্লাসে পুরোনো বিষয় বারবার শেখাতে হচ্ছে। এটি শিক্ষার গতি কমাচ্ছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি কাটাতে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। প্রধান প্রস্তাবনাগুলো হলো:
-
পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে ফিরে আসা: যে কোনো পরিস্থিতিতে অটোপাস বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস বন্ধ করতে হবে।
-
বিশেষ শিখন কর্মসূচি: ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য মৌলিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে কর্মশালা চালু করা।
-
শিক্ষার পরিবেশ পুনর্গঠন: শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
-
সচেতনতা বৃদ্ধি: কর্মশালা ও সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অটোপাসের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করা।
অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শিক্ষার মান নষ্ট করছে। এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও দেশের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নীতিনির্ধারকদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক করা এবং পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে ফিরে আসা জরুরি। ভবিষ্যতে বিরূপ পরিস্থিতিতেও বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। শিক্ষার মান না উন্নত হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।