গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে চুরির অভিযোগের জেরে এক শ্রমিককে কারখানায় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ওই কারখানাটি কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশের অভিযানেও রবিবার রাতে একজনকে আটক করা হয়েছে।
গত শনিবার ভোররাতে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের কারখানায় হৃদয় নামের ১৯ বছর বয়সী এক মেকানিক্যাল মিস্ত্রিকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। নিহত হৃদয় টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ছিলেন।
দুর্ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, হৃদয়কে কারখানার একটি ঘরের জানালার কাছে রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছিল। তিনি যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন এবং মুখ ও নাক থেকে রক্ত ঝরছিলো। তার জিন্স প্যান্টেও রক্তের দাগ স্পষ্ট ছিল। ভিডিওতে শ্রমিকদের কথাও শোনা গেছে, যারা বলছিলেন, ‘এত মারধর করেও সে মরে নাই।’
ভিডিওর অন্য অংশে দেখা যায়, বাঁধা অবস্থায় হৃদয়কে কক্ষ থেকে টেনে বের করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তির হাতে ছিল কাঠের লাঠি। রশির সাহায্যে তার দুই পা ও হাত বাঁধা ছিলো এবং সে ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না।
এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের বড় ভাই লিটন মিয়া কোনাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন, যেখানে অজ্ঞান নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। মামলার সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাতে পুলিশ গ্রিনল্যান্ড লিমিটেডের এক শ্রমিক হাসান মাহমুদকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও মামলার তথ্য অনুযায়ী, হৃদয় ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরেননি। তার পরিবার শনিবার বিকেলে কারখানায় এসে শ্রমিকদের বিক্ষোভ দেখেন এবং জানতে পারেন হৃদয়কে চুরির সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে তারা লাশের সন্ধানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।
লিটন মিয়া দাবি করেছেন, ‘আমার ভাইকে নির্মমভাবে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। পরে হত্যার ছাপ চাপানোর জন্য লাশ হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে। আমরা এ হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার পর ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশে অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষণা করলেও গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে কারখানাটি দুই দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে এবং মঙ্গলবার থেকে পুনরায় চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রিনল্যান্ড লিমিটেডের ডিজিএম কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।