ঢাকার বাংলা একাডেমির নিচতলায় জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘরে মহাস্থান থেকে পাওয়া ব্রাহ্মীলিপি শিলালিপির একটি ছবি আছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রাচীন শিলালিপি বাংলাদেশে নেই; বরং কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৩১ সালে মহাস্থানগড় থেকে এটি পাওয়া হলেও তখনকার ব্রিটিশ শাসন ও প্রশাসনিক কাঠামোর কারণে শিলালিপিটি কলকাতায় নেওয়া হয়েছিল।

শিলালিপিটি ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর বগুড়ার মহাস্থান গ্রামে একজন কৃষক বারু ফকির খুঁজে পান। ব্রিটিশ আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শাখার তত্ত্বাবধায়ক জি সি চন্দ্র এটি সংগ্রহ করে পরে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ব শাখায় পাঠানো হয়। ৯৪ বছর যাবৎ এটি কলকাতার মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে এবং ২০২২ সালে একবার বিশেষ প্রদর্শনীর মাধ্যমে জনসমক্ষে এসেছে।
শিলালিপিটি দৈর্ঘ্যে ৩.২৫ ইঞ্চি, প্রস্থে ২.২৫ ইঞ্চি, পুরুত্ব শূন্য দশমিক ৮৭৫ ইঞ্চি এবং এটি চুনাপাথরে খচিত। এতে মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিতে ছয়টি লাইন লেখা রয়েছে, যা দুর্ভিক্ষকালীন একটি প্রশাসনিক আদেশের দলিল। এতে সম্বঙ্গীয় নামে একটি অঞ্চলের জন্য ধান ও অর্থ সহায়তার নির্দেশ রয়েছে।
বাংলা লিপির প্রাচীনতম উৎস হিসেবে ব্রাহ্মীলিপি বিবেচিত হয় এবং মহাস্থানের শিলালিপি বাংলার ইতিহাস ও ভাষা সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাচীন নিদর্শনটি শুধু প্রশাসনিক দলিল নয়, এটি রাজ্য ও নাগরিকের সম্পর্কের লিখিত চিত্রও।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি দেশের একমাত্র প্রাচীনতম লিপি এবং ‘মাস্টারপিস’ হিসেবে জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। তিনি সরকারের কাছে শিলালিপি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঔপনিবেশিক আমলে লুট হওয়া প্রত্নসম্পদ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘ইউনেসকো ১৯৭০ কনভেনশন অন কালচারাল প্রোপার্টি’ এর আওতায় অনেক দেশের প্রত্নসম্পদ ফেরত এসেছে। বাংলাদেশও এই কনভেনশনের সদস্য। তাই কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে শিলালিপিটি ফেরত আনা সম্ভব।
তবে আইনি ও কূটনৈতিক জটিলতা রয়েছে। ২০১৯ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে শিলালিপি ফেরত চাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিন্তু সাড়া মেলেনি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি, ১৯৭২-এর আওতায় এই উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
মহাস্থানের শিলালিপি বাংলা ভাষা ও ইতিহাসের এক অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। দীর্ঘদিন ধরে এটি ভারতের কলকাতায় সংরক্ষিত থাকায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে শিলালিপিটি দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন। এতে জাতীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সঙ্গে জনগণের আত্মপরিচয় জোরদার হবে।