সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এ অস্পষ্টতা ও পূর্বের ধারার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে জনগণকে হয়রানির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আইনের অস্পষ্টতাকে ব্যবহার করে যারা আইন প্রয়োগ করে, তারা সেটাকে নিপীড়নের হাতিয়ার বানিয়েছে।
শনিবার (৬ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ কতটুকু সুরক্ষা দেয়’।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আইনে যদি অস্পষ্টতা থাকে এবং জনগণ হয়রানির শিকার হয়, তাহলে সে অস্পষ্টতা দূর করা আইন প্রণয়নকারীদের দায়িত্ব। অধ্যাদেশে কিছু ধারা বাতিল করা হলেও একই রকম বিধান ভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে, যা গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার পথ খুলে দেয়।”
তিনি আরো বলেন, “যারা আইন অপপ্রয়োগ করে জনগণের ওপর নিপীড়ন চালায়, তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থাও থাকতে হবে।” এই বিষয়ে রাজনৈতিক দল, রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজকে আইন ব্যাখ্যার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অধ্যাদেশটির ৩৫ নম্বর ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “যদিও বলা হচ্ছে বিধান সংকুচিত করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে পুলিশ সীমাবদ্ধতা মানে না। এমনকি যেসব বিষয়ে আইন নেই, সেখানেও তারা ব্যবস্থা নেয়।” সাইবার অধ্যাদেশটি বাতিল করার দাবি জানান তিনি।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতা ও মব ভায়োলেন্স নিয়েও বক্তব্য দেন মান্না। তিনি বলেন, “সাবেক নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার বাড়িতে মব লেলিয়ে দেওয়ার ঘটনা সাংস্কৃতিক ও আইনগতভাবে বিপজ্জনক। যদি কেউ অন্যায় করে, তাহলে বিচারিক প্রক্রিয়ায় তার শাস্তি হওয়া উচিত, মব বিচার নয়।”
এ কে আজাদের বাড়িতে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাড়ি ভাঙা বা থানা ঘেরাও করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া- এগুলো গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় সরকারের ব্যর্থতা কত গভীর।”
ভয়েস ফর রিফর্মের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশুরুর বক্তব্যে উঠে আসে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের কিছু ইতিবাচক দিক, তবে তিনি বলেন, “যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে, সেখানেই সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা। আগে দেখা গেছে এনটিএমসি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই মানুষের ফোনালাপ ফাঁস করেছে। তারাই গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য দায়ী।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। বক্তব্য দেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রধান সমন্বয়ক আকরাম হুসাইন।