দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর জানান, দ্বীপটির জন্য মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের উৎস নিশ্চিতের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দ্বীপটির প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে পর্যটন নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে প্রকৃতির ক্ষতি কমিয়ে দ্বীপকে আবারও সুস্থ ও প্রাণবন্ত রূপে ফিরিয়ে আনা যায়।
মন্ত্রণালয়ের শুক্রবার প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় একাধিক যুগান্তকারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- সারা দেশের শপিংমলগুলোতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ
- পলিথিন উৎপাদন কারখানা, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান
- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহ
- ‘জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন ও ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভাঙা
- সাভার ও আশুলিয়াকে ‘দূষিত বায়ুমণ্ডল’ এলাকা ঘোষণার প্রক্রিয়া
- অবৈধ সীসা কারখানা বন্ধ ও শব্দদূষণ প্রতিরোধে তরুণদের যুক্তকরণ
- গাজীপুরের গাছা খাল দূষণকারী ৯টি কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সব পলিথিন কারখানা বন্ধ
পাহাড় সংরক্ষণে ১৬টি জেলার তালিকাভুক্ত পাহাড়ের তথ্য অনলাইন ডেটাবেজে যুক্ত করা হয়েছে এবং নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন এবং ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত হয়েছে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কক্সবাজার ও সোনাদিয়ায় বরাদ্দকৃত ১০,৩২২ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার, পূর্বাচলে ১৪৪ একর এলাকা বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা ঘোষণা, গত এক বছরে বেদখল হওয়া ৫,০৯৩ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার এবং বনায়ন করা হয়েছে।
ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি চারা উৎপাদন-রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মধুপুর শালবন পুনরুদ্ধারে বিশেষ উদ্যোগ এবং হাতির চলাচলের পথ সুরক্ষায় চুনতি ও শেরপুরে বন পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানব-হাতি সংঘাত কমাতে ১৫৯টি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’ গঠন, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ময়ূর ফিরিয়ে আনা, জলাভূমি অভয়ারণ্য ঘোষণা, বিপন্ন প্রজাতি সুরক্ষা, ২৯৩টি বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন অভিযানে ৫,৬৮৪টি প্রাণী উদ্ধারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় উদ্যান ও ইকোপার্কে প্লাস্টিক ব্যবহার ও পিকনিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণী আইন আধুনিকীকরণ এবং নতুন আইন ও বিধি প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এসব উদ্যোগ দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং জলবায়ু সহনশীল, টেকসই বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।