বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে মহাপরিচালক, কমিশনারসহ ৩০ জনের বেশি বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত চার বছরে গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সম্প্রতি বিটিআরসিকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিটি ৩০ জুলাই জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্ত করার পাশাপাশি স্বাক্ষর করার ক্ষমতা (সাইনিং পাওয়ার) স্থগিত রাখতে হবে। এই নির্দেশ কার্যকর থাকবে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত।
জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিটিআরসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ কমিটি ও কমিশন সভার সিদ্ধান্তে নিয়োগ পাওয়া ২৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জনের বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করেনি। এদের অনেকে আবেদন করারও অযোগ্য ছিলেন।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, এ ২৯ জনের মধ্যে ১৫ জন ইতিমধ্যেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে দায়িত্বশীল পদে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সরাসরি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তদন্তে যাদের নাম এসেছে- তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী, মহাপরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন, মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগ) আশীষ কুমার কুণ্ডু, পরিচালক এম এ তালেব, পরিচালক আফতাব মো. ওয়াদুদ, পরিচালক মো. এয়াকুব আলী ভূইয়া, উপপরিচালক আসাদুজ্জামান ও উপপরিচালক শারমিন সুলতানা।
তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, সাবেক কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী কোনো চুক্তি ছাড়াই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে তিনি যে বেতন-ভাতা নিয়েছেন, তা ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
অন্যদিকে মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুণ্ডুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কমিশন সভার সুপারিশ ও নির্দিষ্ট প্রস্তাব ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটিয়েছেন এবং বিভিন্ন যোগাযোগে সময়ক্ষেপণ করেছেন। তবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি কমিশনের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করিনি।”
উপপরিচালক আসাদুজ্জামান নিয়োগ পেয়েছেন প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই—এমন অভিযোগও উঠে এসেছে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০০৯ সালের বিজ্ঞপ্তির যোগ্যতা অনুযায়ী আমি আবেদন করেছি। চাইলে বিজ্ঞপ্তি ও সার্টিফিকেট দেখাতে পারব।”
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। কমিশনের মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিকেশন উইংয়ের উপপরিচালক জাকির হোসেন খানও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

