জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটি মানুষ চরম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে ভুগছে—যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮ শতাংশ। এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে, যা বৈশ্বিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশের সমান।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই)’–এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৮ কোটি ৭ লাখ মানুষ অন্তত একটি জলবায়ু সমস্যার সরাসরি শিকার।
এর মধ্যে—
- ৬০ কোটি ৮ লাখ মানুষ চরম তাপে,
- ৫৭ কোটি ৭ লাখ দূষণে,
- ৪৬ কোটি ৫ লাখ বন্যায়,
- এবং ২০ কোটি ৭ লাখ মানুষ খরায় ভুগছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ৬৫ কোটির বেশি মানুষ অন্তত দুই ধরনের বিপদের মুখে। ৩০ কোটির বেশি মানুষ তিন বা চার ধরনের বিপদের সম্মুখীন। এমনকি ১ কোটি ১ লাখ মানুষ গত এক বছরে চারটি বিপদই একসঙ্গে অনুভব করেছে।
দারিদ্র্য ও জলবায়ু বিপর্যয়ের এই যুগপৎ সংকট এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রতিবেদনের পরিমাপে শিশু মৃত্যুহার, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ও বাসস্থানের মতো মৌলিক সূচক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি শিশু।
ইউএনডিপির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হাওলিয়াং শু বলেন, “খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ বা বায়ুদূষণের প্রভাব থেকে কেউই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই এর ভয়াবহ প্রভাবের মুখে।” তিনি আসন্ন COP30 জলবায়ু সম্মেলনকে জলবায়ু ও দারিদ্র্য মোকাবিলার যৌথ পদক্ষেপের সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানান।
প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা শহরের উপকণ্ঠে থাকা গুয়ারানি আদিবাসী রিকার্ডোর গল্প। তিনি দিনমজুর হিসেবে সীমিত আয়ে স্ত্রী, তিন সন্তান, বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনসহ ১৮ জনের সঙ্গে একটি ছোট ঘরে বসবাস করেন। বাড়িতে মাত্র একটি বাথরুম, কাঠ-জ্বালানি রান্নাঘর, আর কোনো শিশুই স্কুলে যায় না।
ইউএনডিপি জানিয়েছে, সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া দারিদ্র্য ও জলবায়ু বিপর্যয়ের যুগপৎ প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। চরম তাপমাত্রা, খরা, বন্যা ও বায়ুদূষণ এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে নতুন দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
প্রতিবেদনটি উপসংহারে বলেছে, “একাধিক ঝুঁকির মোকাবিলা করতে হলে মানুষ ও পৃথিবী উভয়কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুধু স্বীকৃতি নয়, এখন সময় বাস্তব পদক্ষেপের।”

