জুলাই বিপ্লব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছরেরও বেশি সময় পর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার মৌলিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইন সংস্কার এবং গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এই পদক্ষেপের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি প্রশংসা জানিয়ে খোলাচিঠি দিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। চিঠি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
চিঠিতে সরকারের প্রতি ১২টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো:
- জবাবদিহিতা ও বিচারের নিশ্চয়তা – পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ।
- নিরাপত্তা খাতে সংস্কার – আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কাঠামোগত সংস্কার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।
- গুমের অপরাধ নির্ধারণ ও তদন্ত কমিশন শক্তিশালীকরণ – নিখোঁজ ও গুমের ঘটনায় কার্যকর তদন্ত।
- জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সংস্কার – স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গঠন।
- ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষায় আইন সংস্কার – ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা।
- ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও নজরদারি সীমিতকরণ – তথ্য সুরক্ষা আইন প্রয়োগ।
- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার – যেসব মামলা প্রমাণহীন বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে তা বন্ধ করা।
- আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার – রাজনৈতিক দল ও নেতাদের উপর অনির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়া।
- সিভিল সোসাইটি ও এনজিওর স্বাধীনতা – স্বাধীনতা ও কার্যক্রমের সুযোগ বৃদ্ধি।
- রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা – নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
- আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সঙ্গে সহযোগিতা – আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুসরণ।
- নির্বাচন পূর্ব প্রেক্ষাপট শক্তিশালী করা – স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠান গঠন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলো হলো:
- সিভিকাস,
- কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস,
- ফর্টিফাই রাইটস,
- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ,
- রবার্চ এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস,
- টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে অল্প সময়ের এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মানবাধিকার সুরক্ষা আরও বিস্তৃত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা খাতে এখনও কাঠামোগত সংস্কার হয়নি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য জবাবদিহিতা ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি সহযোগিতা করছে না।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট যেসব মামলার যথাযথ প্রমাণ নেই বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রোহিঙ্গা সংকটেও চিঠিতে সুপারিশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনে সরকার বলেছিল, স্বদেশ প্রত্যাবাসন একমাত্র সমাধান। নতুন আগত শরণার্থীদেরও ‘ফিরে যেতে দিতে হবে’। কিন্তু ২০২৩ সালের শেষ থেকে আগত প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গাসহ কারও জন্য মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নেই।
এর প্রেক্ষিতে চিঠিতে বাংলাদেশের সকল মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য উপরের ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।