কার্তিকের প্রথম দিকেই কুড়িগ্রামের বাতাসে মিশে গেছে শীতের গন্ধ। এখনও পৌষ মাস আসতে দেড়–দুই মাস বাকি, কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই চারপাশে নেমে আসে কুয়াশার আস্তর। দিনে রোদে ঝলমলে আকাশ থাকলেও রাতের পরিবেশ ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে—মনে করিয়ে দিচ্ছে, শীত যেন দরজায় কড়া নাড়ছে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই জেলায় শীতের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে অনেকটাই। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ৩২ ডিগ্রি। গত এক সপ্তাহে গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল এখন কুয়াশায় ঢাকা সাদা সকালে ঘুম ভাঙায়। গ্রামের গাছের পাতা, ধানক্ষেত, ঘাস কিংবা খোলা আকাশের নিচে থাকা মোটরসাইকেল—সবকিছুর গায়ে জমে থাকে শিশিরের ফোঁটা। যদিও এখনও তেমন ঠান্ডা পড়েনি, তবে সন্ধ্যা নামার পর থেকেই শরীরে হালকা শীতের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে।
শহরের বাজারগুলোতেও শুরু হয়েছে শীতবরণের প্রস্তুতি। ফুটপাতজুড়ে সাজানো নতুন কম্বল, সোয়েটার, উলের টুপি আর গরম কাপড়ের পসরা। বিকেলের দিকে রাস্তায় ঘুরলেই দেখা যায়, মৌসুমি বিক্রেতারা ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ দোকান খুলে ভাপা ও চিতই পিঠা বানাতে ব্যস্ত। গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠার ঘ্রাণে ভরে উঠছে কুড়িগ্রামের বাতাস।
কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দা মুকুলের কথায়, “এ বছর কুয়াশা একটু আগেভাগেই দেখা দিচ্ছে। রাতে বাইরে বের হলে ঠান্ডা লাগছে, আর কুয়াশার কারণে সড়কে গাড়ি চালাতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। শীত যেন একেবারে দরজার কাছে।”
উলিপুরের রসূলপুর গ্রামের মিজানুর বলেন, “রাতে কুয়াশা বেশ ঘন হচ্ছে। ঠান্ডা তেমন না লাগলেও বোঝা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই শীত জমে যাবে।”
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আল-আমিন মাসুদ বলেন, “শনিবার সকালে রাজারহাটের সড়কে এমন ঘন কুয়াশা দেখেছি, মনে হচ্ছিল যেন পৌষ মাস এসে গেছে।”
তিনি অভিভাবকদের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, “এই সময় দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা—তাপমাত্রার এই ওঠানামায় শিশুরা সহজেই সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত হয়। তাই রাতে পাখার গতি কমিয়ে রাখা, হালকা গরম কাপড় পরানো এবং বাইরে নিয়ে গেলে ধুলাবালি ও ঠান্ডা এড়িয়ে চলা জরুরি।”
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, “দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ক্রমেই কমছে। কার্যত শীতের শুরু হয়ে গেছে বলা যায়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।”
কুড়িগ্রামের মানুষ এখন শীতের সেই আগাম সুর শুনছে। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল আর পিঠার সুবাসে শীতের আগমন যেন আনন্দ আর উষ্ণতার নতুন বার্তা বয়ে আনছে উত্তরবঙ্গের এই প্রান্তে।

