মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খসে একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক জনের জীবনের মূল্য ধরা হলো পাঁচ লাখ।
আমাদের দেশে এমন দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষই মরে, কখনো ভিআইপি বা তাদের আত্মীয়স্বজন নয়। তাই প্রশাসনও নড়ে না। অথচ এমন দুর্ঘটনা এক দিনে ঘটে না, দিনের পর দিন ব্যবস্থাপনার অভাবেই ঘটে।
প্রশ্ন হচ্ছে—রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার? সে দায় কেউ স্বীকার করবে না, এটা নিশ্চিত। এ দেশে দায় এড়ানোই যেন সংস্কৃতি হয়ে গেছে। সবাই দোষ চাপায় অন্যের ঘাড়ে।
নিহতের পরিবারকে যে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটাই নাকি অনেক! অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কেউ বললে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না—‘এটা বিরোধী দলের কাজ, তারা পিলার নাড়াচাড়া করেছে।’ এ ধরনের কথা আমরা আগেও শুনেছি, এক বহুতল ভবন ধসের সময় এক জনপ্রতিনিধি এমন মন্তব্যই করেছিলেন।

এখন কেউ কেউ বলছেন, এ দায় বিগত সরকারের, দুর্নীতির কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। এই যুক্তিও পুরোপুরি টেকে না। যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ ধরলে বিষয়টা স্পষ্ট হয়—সেখানে দায়িত্ব মানে পূর্ণ দায়িত্ব। কোনো অজুহাত চলে না। শিক্ষককে বলা যায় না, “আমার দাদি মারা গেছেন”, বা “কুকুরটা আমার অ্যাসাইনমেন্ট খেয়ে ফেলেছে।” সেখানে জবাবদিহি আছে, দায়িত্বে গাফিলতি মানেই ব্যর্থতা।
কিন্তু আমরা বাঙালিরা যেন তিন হাতের জাতি—ডান, বাম, আর তৃতীয় হাত ‘অজুহাত’। আমরা সবকিছুর দায় দিই অন্য কারও ঘাড়ে—‘আগের সরকার খারাপ ছিল’, ‘আগের ম্যানেজার গণ্ডগোল করে গেছে’। অথচ তোমাকেই তো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আগের ভুল ঠিক করতে। তুমি পারছ না, তাহলে সরে দাঁড়াও—এটাই স্বাভাবিক পদ্ধতি।
একই যুক্তি এখন দেশের প্রশাসন ও রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আগের সরকার ভোটচোর, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজ—এসব অজুহাতের সময় শেষ। এক বছরের বেশি হয়ে গেছে অন্তর্বর্তী সরকারের। এখনো যদি বলা হয়, “আগের সরকার দায়ী,” তাহলে পরিবর্তনের মানে কী?
সিঙ্গাপুর স্বাধীন হয়েছিল ১৯৬৫ সালে, আমরা ১৯৭১ সালে। তখন তারা ছিল বস্তির দেশ, আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত। আজ তারা বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র, আর আমরা এখনো অজুহাত খুঁজি। কেন? কারণ আমাদের সেই ‘তৃতীয় হাত’—অজুহাত—এখনও কাটা পড়েনি।
সূত্র: প্রথম আলো

