দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর আবার খুলছে। পর্যটকরা এবারও উপভোগ করতে পারবেন দ্বীপের শান্ত ও মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তবে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য এই খুশির খবর খুব বেশি স্বস্তি নিয়ে আসে নি। কারণ, তাদের জীবিকার এক বড় অংশই এই পর্যটন মৌসুমের ওপর নির্ভরশীল। নভেম্বরের শুরুতে পর্যটন কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় স্থানীয়দের আয়ের সুযোগও কম।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ২২ অক্টোবরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সরকার পর্যটকদের ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু নভেম্বরে কাউকে দ্বীপে রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এই নির্দেশনায় মোট ১২টি শর্ত রয়েছে, যার মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধের নির্দেশও রয়েছে।
তাছাড়া, সরকারের নতুন সংরক্ষণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দৈনিক দর্শনার্থীর সংখ্যা দুই হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। জাহাজ চলাচলও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে, এবং যেকোনো জাহাজ পরিচালনার জন্য BIWTA-এর অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
পর্যটকদের জন্য ভ্রমণপাস ও কিউআর কোড ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, তবে এখনো এটি কার্যকর হয়নি। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট অবৈধ হবে।
সেন্টমার্টিনে মূল পর্যটন মৌসুম শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ে রাত্রিযাপনও করা যাবে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে দ্বীপ আবার বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই নভেম্বরে রিসোর্ট মালিকদের উৎসাহ কম। মারমেইড সেন্টমার্টিন রিসোর্টের ব্যবস্থাপক তৈয়বুল উল্লাহ জানান, “পর্যটকরা ফোন করে জানতে চান নভেম্বর মাসে থাকবেন কি না। যেহেতু অনুমোদন নেই, আমরা বুকিং নিতে পারি না। নভেম্বরের জন্য এই কার্যক্রম বাস্তবসম্মত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বর-জানুয়ারির জন্য আমরা প্রস্তুতি শুরু করি নভেম্বরে। বিছানার চাদর ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঠিক সময়ে কেনা হয়। আগে শুরু করলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।”
পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয়দের জন্য শুধুমাত্র দুই মাসের মৌসুম অনেক সীমিত। তৈয়বুল উল্লাহ বলছেন, “আমাদের অনেক পরিবার পুরোপুরি পর্যটন মৌসুমের আয়ের ওপরই নির্ভর করে। যদি শুধু দুই মাসে ব্যবসা হয়, তবে পুরো বছরের প্রয়োজন মেটানো কঠিন।”
সাধারণত কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত আট থেকে দশটি জাহাজ চলাচল করে। কর্ণফুলি গ্রুপের পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, “নভেম্বরের কার্যক্রম এখনও অনিশ্চিত। জাহাজগুলো প্রায় সাত থেকে দশ ঘণ্টায় দ্বীপে পৌঁছায়, ফলে দিনের মধ্যে যাওয়া-আসা কঠিন। পর্যটকও এই সীমিত সময়ের জন্য আগ্রহী নন। এছাড়া নিবন্ধন ওয়েবসাইট এখনও চালু হয়নি, তাই অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।”
গ্রিন বিচ রিসোর্টের মালিক মো. সোহেল জানান, “নভেম্বরে পর্যটকের সংখ্যা খুব বেশি আশা করা যায় না। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারির জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছি। ছোট রিসোর্টগুলোতে দর্শনার্থীদের সংখ্যা সীমিত থাকলে ব্যবসা চালানো কঠিন হবে। বড় রিসোর্টে বেশি পর্যটক যাচ্ছেন, ছোটগুলোতে না।”
সরকার বারবার দ্বীপের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষার গুরুত্ব জানিয়েছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করে আসছেন, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন—বিশেষ করে হোটেল নির্মাণ, বর্জ্য ডাম্পিং ও প্রবাল উত্তোলন—দ্বীপের পরিবেশের জন্য মারাত্মক।
কক্সবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, “আমরা পর্যটন কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করব। অনলাইন নিবন্ধন চালু করতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সমস্ত কার্যক্রম বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রিত হবে।”
নভেম্বরের শুরুতে অনুমোদিত জাহাজগুলো প্রস্তুত থাকলেও রিসোর্ট মালিকরা এখনো দ্বীপের দরজা খুলে নি। তারা এখন সময় কাটাচ্ছেন ঢেউয়ের গর্জন শুনে এবং পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকিয়ে, আশা করছে ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মৌসুম যেন পূর্ণরূপে কার্যকর হয়।

