চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্দর রক্ষায় বিক্ষোভ-সমাবেশ ও গণমিছিল চলছে। সব শ্রমিক সংগঠনও এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করেছে।
দেশের বামপন্থী দলগুলো দীর্ঘদিন বন্দর নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসলেও- এবার ডানপন্থী সংগঠনগুলোও মাঠে নামছে। দাবির বাস্তবায়নের জন্য আগামী সপ্তাহে হরতাল ও অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও কর্মসূচিও পরিকল্পনায় রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গোপন চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি বন্দর হস্তান্তরের প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গত সোমবার ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএর সঙ্গে পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৪৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান।
এই প্রক্রিয়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জিটুজি (সরকার-টু-সরকার) পদ্ধতিতে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও- আদালতের মৌখিক স্থিতাবস্থার মধ্যেও বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৬ নভেম্বর সাত সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব পাঠায়। এনসিটি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন।
বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের ইতিহাস দীর্ঘ। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব সৌদি আরবের একটি কোম্পানিকে দেওয়ার সময়ও তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ হয়। এরপর লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই চুক্তি বন্দরের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে বিদেশি কোম্পানির হাতে দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলবে।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাসদ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ছাত্র-যুব সংগঠন এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ইতোমধ্যেই গণমিছিল, অনশন, পদযাত্রা ও মশাল মিছিলের মতো কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে।
স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান খান জানিয়েছেন, সরকারের অস্বচ্ছ ও গণবিরোধী প্রক্রিয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বাতিলের দাবি জানানোর পাশাপাশি শনিবার চট্টগ্রামে শ্রমিক কনভেনশন থেকে হরতাল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোড অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোট এই কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, সরকারের গোপন ও স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে চুক্তি করা গ্রহণযোগ্য নয়। সিপিবি ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলও সরকারের অস্বচ্ছ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম, উদীচী ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করাচ্ছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর কোনো বিদেশি শক্তির হাতে হস্তান্তর করা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, স্কপ ও অন্যান্য শ্রমিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে বন্দর রক্ষায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা চুক্তি বাতিল না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

