বিজয়ের আলো ছড়াতেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জমে ওঠে মানুষের আবেগঘন উপস্থিতি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকেই স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে ভিড় করেন সর্বস্তরের মানুষ। ফুল আর ভালোবাসায় ভরে ওঠে শহীদ বেদী, নীরবতায় উচ্চারিত হয় কৃতজ্ঞতার ভাষা।
মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা নিবেদন সম্পন্ন করার পর স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলে মানুষের ঢল নামে পুরো এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হাতে ফুল, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করছেন। একের পর এক পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি জানানো হচ্ছে শ্রদ্ধা। অল্প সময়েই ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদদের স্মরণবেদী।
প্রায় এক মাস ধরে চলা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিরাপত্তার স্বার্থে আগের চারদিন স্মৃতিসৌধ এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই আজ সেখানে নেমেছে মানুষের ঢল—শ্রদ্ধা জানাতে, ইতিহাসের কাছে মাথা নত করতে।
স্মৃতিসৌধে আসা কলেজ শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, তবে বইয়ের পাতায় পড়া ইতিহাস আজ তাঁর সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। পরিবারের সঙ্গে প্রথমবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করছেন।
অন্যদিকে প্রতিবছর নিয়ম করে স্মৃতিসৌধে আসেন সোহাগ মাহমুদ। তিনি বলেন, যাঁদের আত্মত্যাগে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের দায়িত্ব। তাই প্রতি বছরই বিজয় দিবসে এখানে এসে শহীদদের স্মরণ করেন তিনি।
এর আগে ভোর ৬টা ৩৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সকাল ৬টা ৫৭ মিনিটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। বিউগলের করুণ সুর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণকে আরও আবেগময় করে তোলে। পরে প্রধান উপদেষ্টা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিকসহ ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে আজ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা দেশে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করছে—শ্রদ্ধা, স্মৃতি আর অঙ্গীকারের আবহে।

