রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়জন আওয়ামীপন্থী ডিনের পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ সব দপ্তরের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সব দপ্তরে তালা ঝুলানো হয়।
এ সময় সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন অনুষদের ডিনদের কার্যালয়ে তালা ঝুলানো হয়েছিল।
আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে প্রশাসন তাদের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মূল কারণ। বিকেল সোয়া চারটায় প্রতিবেদনের সময় প্রশাসন ভবনের উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক চলছিল।
আজ দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রথমে ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের তিনজন ডিনের কার্যালয়ে তালা ঝুলান। তারা হলেন আইন অনুষদের অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক এ এস এম কামরুজ্জামান এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্ল্যাহ। অন্য তিনজন ডিন হলেন বিজ্ঞান অনুষদে নাসিমা আখতার, প্রকৌশল অনুষদে বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূবিজ্ঞান অনুষদের এ এইচ এম সেলিম রেজা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হইহই রইরই, আওয়ামী লীগ গেলি কই’, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার, সিনেট সদস্য আকিল বিন তালেব, রাকসুর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসলাম, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক রাকিবুল হাসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতি, ডিন, সিন্ডিকেট, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি এবং শিক্ষা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১২টি অনুষদের ডিন নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী হলুদ প্যানেল থেকে ছয়জন প্রার্থী জয়লাভ করেন। গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে উপাচার্য ১১ ডিসেম্বর আইন অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন না হওয়া পর্যন্ত স্বপদে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার ছয় ডিনের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি ফেসবুকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন যে পদত্যাগ না করলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং পরবর্তীতে পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত করা হবে।
আজ সকালে সালাহউদ্দিন আম্মার রাকসু ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ছয়জন ডিনের কেউ উপস্থিত না থাকায় সাংবাদিকদের সামনে একে একে তাদের কল করে পদত্যাগের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে পদত্যাগপত্রও প্রকাশ করেন।
দুপুরে সালাহউদ্দিন এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আজ মোটামুটি সব দপ্তরের আওয়ামীপন্থী ডিনদের কার্যালয় তালাবদ্ধ। বিচার না হওয়া পর্যন্ত তালা ঝুলবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করা শিক্ষকদের তালিকাও সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনেকে বাদ পড়তে পারে, সেটা আগামী তিন দিনের মধ্যে পূরণ করা হবে।”
পদত্যাগ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্ল্যাহ বলেন, তিনি এই পরিস্থিতিতে দায়িত্বে থাকতে চান না। উপাচার্যের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন এবং উপাচার্যের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবেন।
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন জানান, ডিনদের মেয়াদ শেষ হলেও সমাবর্তন, ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যান্য কারণে তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এখন অব্যাহতি দেওয়া গেলে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হবে। উপাচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে সক্ষম হবেন।

