রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা আর ঢালাওভাবে উৎসাহ বোনাস পাবেন না। এখন থেকে কর্মক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে এ সুবিধা। সর্বোচ্চ বছরে তিনবার বোনাস দেওয়া যাবে। পরিচালন মুনাফা নয়, বোনাস নির্ধারণে ভিত্তি হবে নিট মুনাফা।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বিচারে বোনাস দিতে পারবে না।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণ ও অগ্রিমের প্রভিশন, বিনিয়োগ ও সম্পদের মূল্য সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা ধরা হবে। সেই হিসাবের ভিত্তিতেই বোনাস প্রদান করতে হবে। এতদিন এই খাতে শৃঙ্খলার ঘাটতি ছিল। আলোচনার মাধ্যমে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
সূত্র জানায়, আগে থেকেই একটি নীতিমালা থাকলেও তা মানা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে সোনালী ব্যাংক নিয়ম ভেঙে পাঁচটি বোনাস দেয়, যদিও অনুমোদিত ছিল সর্বোচ্চ তিনটি। গত ২৭ মার্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ব্যাংকটির এমডিকে চিঠি দিয়ে বাড়তি দুটি বোনাস ফেরত আনার নির্দেশ দিলেও কোনো কর্মী তা ফেরত দেননি। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অন্য কয়েকটি ব্যাংকেও। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক—সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল—কর্মক্ষমতার পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে বোনাস দেবে। সূচকগুলো হলো:
- চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার
- আমানত বৃদ্ধির হার
- ঋণ ও অগ্রিম বৃদ্ধির হার
- খেলাপি ঋণ আদায়ের হার
- অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার
একই নিয়ম মানতে হবে কৃষি ব্যাংক, রাকাব, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংককে। আইসিবির ক্ষেত্রে সূচকগুলো কিছুটা ভিন্ন। এখানে মুনাফার হার, বিনিয়োগের লভ্যাংশ ও মূলধনি মুনাফা, খেলাপি ঋণ আদায়, শেয়ারবাজারে লেনদেন বৃদ্ধির হার এবং অবলোপন ঋণ আদায় বিবেচনায় নেওয়া হবে। বিএইচবিএফসি-র ক্ষেত্রে ধরা হবে নিট মুনাফার হার, আদায়যোগ্য ঋণের প্রকৃত আদায় এবং ঋণ-বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার।
মূল্যায়নের ভিত্তি হবে ১০০ নম্বর:
- ৪০-এর নিচে কোনো বোনাস নেই
- ৪০–৫০ এ একটি
- ৫০–৬০ এ দেড়টি
- ৬০–৭০ এ দুটি
- ৭০–৮০ এ আড়াইটি
- ৮০-এর বেশি হলে তিনটি, একটি বোনাস মানে এক মাসের মূল বেতন। হিসাব বছরের শেষ মাসের বেতন ধরেই তা নির্ধারিত হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে বোনাস দিতে পারবে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব পর্ষদের সুপারিশের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। কোনো বছর বোনাস প্রাপ্য না হলেও বিশেষ অর্জন থাকলে এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ বোনাস অনুমোদন দিতে পারবে বিভাগ।

