দেশের ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ওপর নজর দিয়েছে সরকার। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) এসব ব্যাংকের জুন পর্যন্ত হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা, মুনাফা, খেলাপি ঋণ, আদায় কার্যক্রম, মামলা, অডিট আপত্তি ও প্রভিশন ঘাটতির বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা মাত্র ২০ জন বড় খেলাপির কাছে আটকে আছে। যা মোট খেলাপি ঋণের ৫৭ শতাংশ। এই ছয় ব্যাংক হলো—অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
বৈঠক শেষে এক কর্মকর্তা বলেন, “ব্যাংকগুলোর মূল সমস্যা খেলাপি ঋণ।” অর্থ উপদেষ্টা নির্দেশ দেন, বড় খেলাপিদের কাছ থেকে আদায়ে জোরদার উদ্যোগ নিতে হবে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ যেন দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বর্তমানে খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত প্রায় ৪৮ হাজার মামলা আদালতে ঝুলে আছে। এ অবস্থায় উপদেষ্টা নির্দেশ দেন ব্যাংকের আইন বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে। পাশাপাশি এফআইডি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করবে যাতে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হয়। আলোচনায় উঠে আসে খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়টিও। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ায় এ ধরনের ব্যবস্থা আছে। তবে বাংলাদেশে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ছাড়া ব্যাংক রেজোলিউশন আইনের আলোকে দেউলিয়াত্ব ব্যবস্থাকে আধুনিক করার ওপরও জোর দেন অর্থ উপদেষ্টা। একই সঙ্গে অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন তিনি।
চ্যালেঞ্জ থাকলেও জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে। গ্রাহকরা টাকা তুলে নেওয়ার বদলে সঞ্চয় ধরে রেখেছেন। এতে আশাবাদী হয়ে উপদেষ্টা বলেন, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আমানত থেকে আরও ঋণ বিতরণ বাড়াতে হবে।

