ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি আজ (শনিবার) প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মীর জন্য ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষা আয়োজন করেছে। পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। যারা অকৃতকার্য হবেন তারা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন। এ তথ্য জানিয়ে গত মঙ্গলবার ব্যাংকের এক দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষা আজ বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এতে কর্মীদের তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে এবং প্রবেশপত্র এইচআরএম সিস্টেম থেকে ডাউনলোডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানদের সব কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ড. এম কামাল উদ্দিন জাসিমের স্বাক্ষর রয়েছে।
এর আগে হাইকোর্ট গত ২৭ আগস্ট রায় দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিকল্পিত মূল্যায়ন বাতিল করার নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, যোগ্য কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা নিতে হবে। একই সঙ্গে কেন এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। আদালত ব্যাংককে আবেদনকারীদের দাবি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
রিট আবেদনকারীরা বলেন, এ পরীক্ষা ‘হাস্যকর প্রক্রিয়া’। তাদের দাবি, অভিজ্ঞ কর্মীদের পাশ কাটাতেই এমন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন জানান, আদালতের নির্দেশ ছিল দীর্ঘদিন চাকরিতে থাকা কর্মকর্তাদের অধিকার রক্ষার জন্য। তবে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে নতুন পরীক্ষার ঘোষণা দেয় ব্যাংক। এতে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বাদ দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ পরীক্ষা আয়োজন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করলে দায়ভার ব্যাংকের ওপরই বর্তাবে। তিনি বলেন, ‘যদি আদালত কোনো প্রক্রিয়া স্থগিত রাখে এবং ব্যাংক তা অমান্য করে, তবে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে।’
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জোবাইদুর রহমান বলেন, ‘উচ্চ আদালত পরীক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেননি। ভুলভাবে কিছু লোক বিষয়টি উপস্থাপন করছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তবে মেধাবীরা বঞ্চিত হবে না।’
এদিকে চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুতির পাঁয়তারা করছে। লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার জন্য এ পরীক্ষা আয়োজন শ্রম আইন, ব্যাংকের সার্ভিস রুলস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধির পরিপন্থি।’
তিনি জানান, এ পরীক্ষায় মূলত ২০১৭ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক বলা হয়েছে এবং জানানো হয়েছে, এটি চাকরিতে বহাল থাকার ও পদোন্নতির পূর্বশর্ত। যারা অংশ নেবেন না বা অকৃতকার্য হবেন তাদের দ্বিতীয় সুযোগ দেয়া হবে না। লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৯ ও ৩১ লঙ্ঘন করে। তাই পরীক্ষাটি বাতিল করে নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানানো হয়।