একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের ক্ষুদ্র আমানতকারীরা আগে টাকা ফেরত পাবেন। যাঁদের আমানত ২ লাখ টাকার কম, তাঁরা একবারেই পুরো টাকা তুলে নিতে পারবেন। প্রশাসক নিয়োগের পর সরকারি তহবিল পাওয়া মাত্রই ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বড় অঙ্কের আমানতকারীরা ধাপে ধাপে টাকা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চারটি ছিল এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে, আর এক্সিম ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করত নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
চলতি মাসের মধ্যেই প্রশাসক নিয়োগ সম্পন্ন হবে। এরপর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নতুন ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদন মিললে রাজধানীর মতিঝিলে সেনাকল্যাণ ভবনে প্রকল্প কার্যালয় স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একীভূত ব্যাংক ধীরে ধীরে পাঁচ ব্যাংকের সব দায়, সম্পদ ও জনবল অধিগ্রহণ করবে। তবে সমালোচনা আছে যে, অধ্যাদেশে নির্ধারিত প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিলে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরবে। ফলে আতঙ্ক কমবে এবং নতুন ব্যাংকের ওপর চাপও কমবে। তারা বলছেন, নতুন ব্যাংককে টেকসই করতে শক্তিশালী পরিচালনা পর্ষদ ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিয়োগে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “সবার আগে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের দিকে নজর দিতে হবে। তাঁদের আতঙ্ক না কাটলে নতুন ব্যাংককে সফল করা কঠিন হবে।” অন্যদিকে, ব্যাংক আমানত বিমা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কোনো ব্যাংক অবসায়ন হলে আমানতকারীরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা ফেরত পান। এবার আইন সংশোধনের মাধ্যমে একীভূত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেও ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়া ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, যাঁদের আমানত ২ লাখ টাকার বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিকল্পনা আছে। তাঁদের একটি অংশ নতুন ব্যাংকের শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বড় আমানতের ২০ শতাংশ শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। সূত্র জানায়, এই পাঁচ ব্যাংকের বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাই নতুন ব্যাংকের প্রাথমিক মূলধন ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার, আর বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত বিমা তহবিল ও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে শেয়ারে রূপান্তরের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত গত মে মাসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। একই সময় ঋণস্থিতি ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আস্থা ফিরলেই নতুন ব্যাংককে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।