বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবাহ থাকার কারণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগাস্টের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে ৪৮৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯১ মিলিয়ন ডলার।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের গণ্ডি অতিক্রম করেছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে প্রবাসী আয় প্রতি মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের উপরে রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালের মার্চে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা এক মাসের হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ অক্টোবর পর্যন্ত নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ২ বিলিয়নের বেশি ডলার কিনেছে।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সার্বিক ব্যালান্স অব পেমেন্ট দাঁড়িয়েছে ৫৩ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১.৪৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত এবং আর্থিক হিসাবের (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি কমায় সার্বিক ব্যালান্স অব পেমেন্টে উন্নতি হয়েছে। যদিও এখনও সামগ্রিক ব্যালান্সে ঘাটতি আছে, তা আগের বছরের তুলনায় অনেক কম।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “চলতি হিসাবকে উদ্বৃত্ত রাখতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়লেও চলতি হিসাব প্রভাবিত হয়নি।” পলিসি থিঙ্ক অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. মো. মাজেদুল হকও বলেন, “বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে জুলাই-আগস্টে চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত রয়েছে।”
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি বেড়ে ১০.৮৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ৯.৯১ বিলিয়ন ডলার, যা ৯.৮০ শতাংশ বৃদ্ধি। একই সময় রপ্তানি ৭.৯৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের ৭.১৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১০.৭০ শতাংশ বেশি।ফলে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৯৯ বিলিয়ন ডলার। জাহিদ হোসেন বলেন, “আমদানির বৃদ্ধি বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ালেও চলতি হিসাবের উপর প্রভাব পড়েনি। এটি বড় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। কারণ দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে আমদানির প্রয়োজন। আমদানি বাড়লে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ে।”
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি কমে ৫২৮ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১.১৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি কমা এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বৃদ্ধিই ঘাটতি কমার প্রধান কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৪১ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের ৩৮৭ মিলিয়নের তুলনায় ৯১ শতাংশ বেশি। জাহিদ হোসেন বলেন, “রপ্তানিকারকরা রপ্তানি আয় আগের চেয়ে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনছেন, যা সার্বিক আর্থিক হিসাবের উন্নতিতে সাহায্য করেছে।”