স্থবির হয়ে পড়া সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম জোরদার করতে ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে সরকার নতুন একটি প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেও অর্থের যোগান দেওয়া হবে। এ তথ্য জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের আগস্টে পূর্ববর্তী সরকার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেছিল। তবে নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি শুরু হওয়ায় প্রস্তুতি পর্যাপ্ত ছিল না। অর্থনীতিবিদরা তখনই এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
প্রথম দিকে কর্মসূচিতে জনসাধারণের আগ্রহ দেখা গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা আন্দোলনের মুখে বাতিল করা হয়। ফলে কর্মসূচিতে স্থবিরতা নেমে আসে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলের ফলে কার্যক্রম বন্ধের গুঞ্জন শোনা গেলেও সরকার শেষ পর্যন্ত চারটি স্কিম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বেসরকারি খাতের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাসী’ এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’ স্কিম অব্যাহত থাকবে। সঙ্গে কর্মসূচি আরও আকর্ষণীয় করতে কিছু পরিবর্তন আনা হবে।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম শক্তিশালী করতে নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে এডিবি। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদেরও এ কর্মসূচির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
এডিবির প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, টেকসইভাবে পেনশন ব্যবস্থা চালাতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। এর জন্য চারটি মূল উদ্যোগ নেওয়া হবে– প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়ন, কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি। এসবের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ আরও কার্যকরভাবে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে টেকসই করতে সহায়ক হবে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চারটি স্কিমে মোট তিন লাখ ৭৫ হাজার ৯৫০ জন মাসিক চাঁদা জমা দিয়েছেন। মোট জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৯৫ কোটি টাকা।