দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে টাকা জমানোর দুটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট) ও ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম)। এফডিআরে গ্রাহক এককালীন বড় অঙ্কের টাকা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখেন, আর ডিপিএস হলো মাসিক কিস্তিতে ধাপে ধাপে টাকা সঞ্চয়ের একটি পরিকল্পনা। ব্যক্তির আয় ও আর্থিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে তিনি এই দুটি পদ্ধতির যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। তবে খাতসংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংকের সুনাম, আর্থিক অবস্থা ও সুদের হার যাচাই করা জরুরি।
এফডিআর: নিরাপদ বিনিয়োগের উপায়:
যাদের হাতে অতিরিক্ত কিছু টাকা আছে এবং স্বল্প বা মধ্যম মেয়াদে ঝুঁকিহীনভাবে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য এফডিআর একটি নিরাপদ উপায়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে গ্রাহক মূল টাকা ও সুদ ফেরত পান। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো নির্ধারিত হারে কর কেটে রাখে। এফডিআরের মেয়াদ সাধারণত ৩ মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। অনেক ব্যাংক এই আমানতের বিপরীতে ঋণ সুবিধা দেয়—জরুরি প্রয়োজনে জমার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যায়। এটি অবসর-পরবর্তী জীবন বা বড় কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয় গঠনে সহায়তা করে। এফডিআরের বড় সুবিধা হলো এটি বাজারের ওঠানামার প্রভাবমুক্ত।
ডিপিএস: ধীরে ধীরে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা:
নিয়মিত আয় থেকে মাসিক ভিত্তিতে সঞ্চয় করতে চান এমন গ্রাহকদের জন্য ডিপিএস উপযুক্ত। এখানে নির্ধারিত কিস্তি পরিশোধ করে নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদসহ মূল টাকা ফেরত পাওয়া যায়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এখানেও নির্ধারিত হারে কর কাটা হয়। ডিপিএস ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক—সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। সাধারণত ডিপিএসের মেয়াদ ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেক ব্যাংক ডিপিএসের বিপরীতে বিমা বা ঋণ সুবিধাও দেয়। আকর্ষণীয় দিক হলো, ছোট অঙ্কের একাধিক ডিপিএস করে গ্রাহক ভবিষ্যতে বড় অঙ্কের টাকা পেতে পারেন। যেমন, মাসে ৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ও ৩ হাজার টাকার দুটি ডিপিএস খুললে মেয়াদ শেষে সুদসহ বড় পরিমাণ টাকা পাওয়া সম্ভব।
যদি হাতে বড় অঙ্কের নগদ অর্থ থাকে, তাহলে এফডিআর লাভজনক। এতে অনেক ব্যাংক মাসিক সুদ প্রদান করে, আবার কেউ কেউ মেয়াদ শেষে মূলধনসহ সুদ ফেরত দেয়। অন্যদিকে, যারা মাসে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করতে চান, তাদের জন্য ডিপিএস সবচেয়ে উপযুক্ত বিকল্প।
ব্যাংকে সরাসরি বা অনলাইনের মাধ্যমে এফডিআর ও ডিপিএস খোলা যায়। এজন্য প্রয়োজন জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত অনুলিপি, ঠিকানার প্রমাণ (যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট), দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং নমিনির তথ্য। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য সঠিকভাবে জমা দিলে সঞ্চয় প্রক্রিয়া সহজ ও নিরাপদ হয়।