আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি ও বেসরকারি অনেক ব্যাংকে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এর প্রভাব এখনও ব্যাংক খাতে দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ২৪টি ব্যাংক বড় ধরনের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকের মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ২৩টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল এক লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। নতুন করে এনআরবিসি ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকও ঘাটতিতে পড়েছে। তবে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক ঘাটতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত সরকারের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বড় পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়। এসব ঋণ খেলাপি হলেও সময়মতো তা রেকর্ড করা হয়নি। পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব লুকানো খেলাপি ঋণ প্রকাশ পায়। ফলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চয় রাখতেও ব্যাংকগুলো সক্ষম হয়নি। এর ফলে মূলধন কমেছে এবং দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) কমে চার দশমিক ৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ন্যূনতম ১০ শতাংশ থাকা উচিত। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে সিআরএআর ছিল ছয় দশমিক ৭৪ শতাংশ। সিআরএআর হলো একটি ব্যাংকের মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত। জুন শেষে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১০টি বেসরকারি ব্যাংক, আটটি ইসলামী ধারার ব্যাংক এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি জনতা ব্যাংকের। জুন শেষে এই ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এরপর অগ্রণী ব্যাংকের সাত হাজার ৬৯৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের চার হাজার ১৭৩ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের তিন হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি, জুন শেষে আট হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এবি ব্যাংকের ঘাটতি ছয় হাজার ৭৭৫ কোটি, পদ্মা ব্যাংকের পাঁচ হাজার ৬১৯ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের চার হাজার ৫১ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এক হাজার ৮৭৮ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক হাজার ৬৪০ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এক হাজার ৩৮৫ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংকের ৩১৬ কোটি, সিটিজেন ব্যাংকের ৮৬ কোটি এবং সীমান্ত ব্যাংকের ৪৫ কোটি টাকা।
ইসলামী ধারার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি ইউনিয়ন ব্যাংকের। জুন শেষে এর ঘাটতি ২১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ঘাটতি ১৮ হাজার ৫০৪ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০ হাজার ৫০১ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৫ হাজার ৫৫২ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ৭৯ কোটি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৯৭৫ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের ৯০১ কোটি এবং আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের ২৫৪ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। জুন শেষে এই ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।