একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের সাধারণ শেয়ারধারীদের শেয়ার শূন্য করার পর তারা কি ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কেউই এই বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানায়নি।
আরও হতাশাজনক, দায়িত্বশীলরা একে অপরের সঙ্গে মিল না রেখে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে লেনদেন স্থগিত করার সময় পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার যা ১০ টাকা মূল্যে অভিহিত, তা ১.৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছিল। অথচ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারগুলিতে অনেক বেশি মূল্যে বিনিয়োগ করেছিলেন। ক্রমাগত দরপতনের কারণে শেয়ারগুলির দাম কমে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেয়ার শূন্য করা হলেও সাধারণ শেয়ারধারীরা বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাওয়ার অধিকার রাখেন, যদিও তারা মুনাফা পাননি। প্রসঙ্গত, আগের শাসনামলে এই ব্যাংকগুলো ব্যাপকভাবে লুট হয়ে গেছে। সেই সময় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ ঘটনায় সরকারেরও যোগসাজশ ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। পাঁচ ব্যাংকের বেশিরভাগ গত সরকারের সময়ে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অপরদিকে এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এই ব্যাংকগুলোকে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করেছে। পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে, এমডিদের অপসারণ করেছে এবং প্রশাসক নিয়োগ করেছে। আমরা মনে করি, বিনিয়োগকারীরা যখন সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ার শূন্য করার পদক্ষেপকে বেআইনি ও বৈষম্যমূলক বলছেন, তা অযৌক্তিক নয়। এই ক্ষেত্রে তারা যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের দুর্বলতা তুলে ধরেছেন, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বিনিয়োগকারীরা শুধু তাদের অর্থের সুরক্ষা নয়, একই সঙ্গে মুনাফার আশায় ব্যাংকে আমানত রাখেন। ব্যাংক ও তার নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য আমানতকারীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
চলতি মাসের শুরুতে সমস্যাগ্রস্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, এক্সিম, গ্লোবাল ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হওয়ার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই বিষয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার সাংবাদিকরা সচিবালয়ে গেলে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। তখন অর্থ উপদেষ্টা পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট প্রশ্ন করতে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কিছু করণীয় নেই। পরে অর্থ উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দেখা হবে।
আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। কেবল একীভূতকরণের পর নয়, সর্বদা ব্যাংকের অবস্থার তদারকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। কোনো ব্যাংকের খারাপ প্রবণতা দেখা দিলে সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ ও অন্যান্য ব্যাংকের সহযোগিতায় ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
তবে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখার প্রয়োজন। অনেক শেয়ারধারী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। আমানতকারীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একীভূতকরণের আগে তাদের স্বার্থ সর্বাগ্রে রাখা উচিত ছিল। অর্থ উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, তাই বিলম্ব না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সূত্র: সমকাল

