সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য উৎসাহ বোনাস প্রদানের পৃথক নীতিমালা সম্প্রতি জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন নীতিমালায় সরকারি ব্যাংকগুলো লোকসানেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কর্মীদের উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এমন সুযোগ নেই। মুনাফা হলেও তারা কর্মীদের উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ থাকায় তারা সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উৎসাহ বোনাস সাধারণত এক মাসের মূল বেতনের সমান হয়। দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সাতবার পর্যন্ত বোনাস দিতে পারে। অতীতে কিছু ব্যাংক একক কর্মকর্তাকে দুই কোটি টাকারও বেশি বোনাস দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক প্রজ্ঞাপন জারি করে বোনাস প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। সরকারি খাতের ব্যাংকের নীতিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বেসরকারি ব্যাংকের জন্য নীতিমালা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা নির্ধারণের সময় ঋণ ও অগ্রিমের প্রভিশন, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি প্রভিশন সমন্বয় করতে হবে। এরপর বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে বোনাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিনটির বেশি বোনাস পাবেন না। বোনাস প্রাপ্য না হলেও মন্ত্রণালয় এক বোনাস প্রদানের দাবি বিবেচনা করতে পারবে। নির্দেশিকা ২০২৪ সালের বোনাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি ব্যাংক নিট মুনাফা না করলে বোনাস দিতে পারবে না। মূলধন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ঘাটতি থাকলেও বোনাস দেওয়া যাবে না। বিলম্ব সুবিধা থাকলেও তা মুনাফার হিসাবের জন্য বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। ফলে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকের বোনাস আটকে যেতে পারে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কেবল প্রকৃত আয়-ব্যয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন হলে বোনাস দেওয়া যাবে। পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের বোনাস দেওয়া যাবে না। এছাড়া শ্রেণীকৃত ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং বিভিন্ন ব্যাংকিং সূচকের বাস্তব উন্নতি থাকতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও মূলধনে বড় ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বোনাস দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। অথচ বেসরকারি ব্যাংকগুলি অনেক সময় ঘাটতি পরবর্তীতে মুনাফার সঙ্গে সমন্বয় করে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক বোনাস দিতে পারবে না।
বর্তমানে অনেক ব্যাংক বছর শেষে বা ছুটির পরদিনই বোনাস দেয়। কেউ কেউ বিভিন্ন ছাড়ের মাধ্যমে মুনাফা দেখিয়ে বোনাস দেয়। নতুন নির্দেশনার ফলে বেসরকারি ব্যাংকে এই প্রথা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংকের কর্মীরাই শুধু বোনাস পাবেন।

