অস্বাভাবিক হারে মন্দ ঋণ বাড়ায় দেশের ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ২৪টি ব্যাংকে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ব্যাংকারদের মতে, বিগত বছরগুলোতে ঋণ বিতরণের সময় ব্যাংকগুলো যথাযথ নিরাপত্তা জামানত নেয়নি। অনেক ক্ষেত্রে যে জামানত রাখা হয়েছে, তার মূল্যায়নও অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে। ফলে ঋণ খেলাপি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চয় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ২৪টি ব্যাংকের সম্মিলিত প্রভিশন ঘাটতি সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল মাত্র ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এক বছরে এই তালিকায় ১৪টি ব্যাংক নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে এবং ঘাটতি বেড়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত প্রভিশনের বেশি সঞ্চয় রাখায় দেশের ব্যাংক খাতের মোট প্রভিশন ঘাটতি ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ৭৪ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকের ২৫৯ কোটি টাকা, আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রভিশনে ৩৮৭ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে ব্যাংকের এই অবস্থার পেছনে মূল কারণ হলো খেলাপি ঋণের ক্রমবর্ধমান হার। সম্প্রতি এই ঋণ আরও বেড়েছে। এজন্য এখন প্রতিটি খেলাপি ঋণের জন্য শতভাগ প্রভিশন রাখা প্রয়োজন। তারা সতর্ক করে বলছেন, প্রভিশন ঘাটতি কমাতে প্রথমে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই-বাছাই করতে হবে, যাতে টাকাগুলো ফেরত আসে।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমানের খেলাপি ঋণের জন্য ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক খেলাপির জন্য ৫০ শতাংশ, আর মন্দ বা লোকসান ঋণের জন্য ১০০ শতাংশ প্রভিশন আলাদা রাখতে হয়।
উচ্চ খেলাপির কারণে বেসরকারি খাতের শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৮২ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের এএমডি কামাল উদ্দিন জসিম বলেন, “ব্যাংকের বিভিন্ন ঋণে অনিয়মের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এতে প্রভিশনেও ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমরা ঋণ উত্তোলনের জন্য নিয়মিত মামলা ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।

