পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত নবগঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ায় নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। সমস্যা মূলত পুরোনো ব্যাংকের গ্রাহকদের। তাদের সব হিসাব নতুন ব্যাংক, অর্থাৎ সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে প্রতিস্থাপন করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ করতে পারছে না। এতে একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জরুরি প্রয়োজনেও তারা নিজেদের হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারছেন না। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসা, বিয়ে, সন্তান পড়াশোনাসহ জরুরি কাজে ব্যবহার করার জন্যই আমরা ব্যাংকে টাকা জমিয়েছিলাম। গ্রাহকদের দাবি, চলতি সপ্তাহে টাকা ফেরত না দিলে ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি নেওয়া হবে।
পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত নতুন ব্যাংক:
এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহক আলিফ রেজা বলেন, ‘আমরা কষ্টার্জিত অর্থ ব্যাংকে জমিয়েছি। তা ফেরত পাওয়ার আশায় আজও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বারবার কথা দিলেও তা রাখতে পারছেন না। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহে টাকা ফেরত না পেলে ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি হবে। এতে আমরা ও আমাদের পরিবারের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারিখ পরিবর্তন করেছি। এখন আমরা সব গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ২৩ তারিখের কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।’
এক্সিম ব্যাংকের আমানতকারী সোহানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ী হিসাবের টাকা নিরাপদ। কিন্তু এফডিআর, ডিপিএস ও সঞ্চয়পত্রে দুই লাখ টাকার বেশি আমানতের বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা নেই। ২৩ ডিসেম্বর আমরা স্পষ্ট নির্দেশনা চাই।’
প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক জটিলতা:
দুর্বল পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরের কাজ চলাকালীন প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। নতুন ব্যাংকের জন্য আলাদা কোনো এইচআর বিভাগ এখনো গঠিত হয়নি। তবে নতুন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজল্যুশন ডিপার্টমেন্টের (বিআরডি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে নতুন ব্যাংকের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে অর্থ ছাড় করেছে। তবে প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জের কারণে কিছু দেরি হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। চলতি মাসেই টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে।’
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত বিমা তহবিলের অর্থ আমরা পেয়ে গেছি। গ্রাহকদের নতুন ব্যাংকের অধীনে অর্থ দিতে সবার নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। পাঁচ ব্যাংকের পুরনো অ্যাকাউন্টও একীভূত করতে হবে। শাখাভিত্তিক অর্থ ছাড় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।’
টাকা উত্তোলনের সীমাবদ্ধতা:
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যাদের হিসাব সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা, তারা চাইলে পুরো টাকা তুলতে পারবেন। যাদের হিসাব দুই লাখ টাকার বেশি, তারা আপাতত সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাবেন। বাকি অর্থ ফেরতের নীতিমালা পরে নির্ধারণ করা হবে। একাধিক হিসাব থাকলে শুধুমাত্র একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা দেওয়া হবে। ঋণ থাকলে অর্থ ফেরত আপাতত বন্ধ থাকবে এবং সুদের হার নতুনভাবে নির্ধারণ করা হবে।
গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে মোট প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আমানত বিমা তহবিল’ থেকে ছাড় হয়েছে। সরকারের বরাদ্দকৃত ২০ হাজার কোটি টাকা থেকেও অর্থ ছাড় হয়েছে।

