হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।
আজ (সোমবার) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আলী এই তথ্য জানান।
মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, কার্গো ভিলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কার্যকর ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। কার্গো ভিলেজের প্রধান ব্যবহারকারীরা মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা। তারা হালকা যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক পণ্য, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, অ্যাক্সেসরিজ এবং নমুনা আমদানি ও রপ্তানির জন্য এই স্থান ব্যবহার করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র ও পার্সেল আদান-প্রদানে কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে।
তিনি আরও বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানির জন্য এই স্থানের ওপর নির্ভরশীল। হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানিকাররাও কার্গো ভিলেজের ওপর নির্ভর করেন। এই ধরনের পণ্য সময়মতো বিদেশে না পৌঁছালে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে, অগ্নিকাণ্ড বা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে রপ্তানি শিল্পে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতি ঘটতে পারে।
ইএবি সভাপতি জানান, ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্ধারণ করা কঠিন। সরাসরি ক্ষতি হয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্যে। তবে এর সঙ্গে পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল থেকে উৎপন্ন পণ্য রপ্তানি না হওয়ার ফলে আরও বড় ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কয়েকদিন ব্যাহত হবে, বাজারে অবস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে, ক্রেতাদের আস্থা কমবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সদস্যদের কাছে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা করছি। তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়নি। স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে সামগ্রিক ক্ষতির সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা, সব মিলিয়ে ক্ষতি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার।”
মোহাম্মদ হাতেম আলী আরও যোগ করেন, বিদেশি ক্রেতারা এই অগ্নিকাণ্ডের খবরে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন। দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার দায় কেউ এড়াতে না পারে-সেজন্য দায়িত্ব অবহেলার শাস্তি থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত শুরু করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে।” সংবাদ সম্মেলনে ইএবি সদস্য এবং বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

