গত ছয় অর্থবছরে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যেখানে রপ্তানি ছিল ১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে। এই আয়ের বড় অংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। ছয় বছরে তা ১১৫ শতাংশেরও বেশি বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পৌঁছেছে ২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এক বছরেই তা ২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি প্রবণতা নেদারল্যান্ডসে পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের গভীরতা নির্দেশ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ টেকসই উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। নেদারল্যান্ডস পরিবেশ ও টেকসই বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। তাই ক্রেতারা বাংলাদেশি পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, জানিয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২১ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর আগের বছর আয় ছিল ১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। নিটওয়্যার পণ্যের অবদান ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ৯২৬ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। ওভেন পণ্যের রপ্তানি ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ বেড়ে ৮৭৯ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যেখানে আগের বছর তা ছিল ৭৯৭ মিলিয়ন ডলার।
তৈরি পোশাকের পাশাপাশি প্রধান রপ্তানিপণ্য হিসেবে টেক্সটাইল সামগ্রী ও পুরাতন বস্ত্রজাত পণ্য থেকে আয় হয়েছে ৫০ মিলিয়ন ডলার। পাদুকা ও অনুরূপ সামগ্রী থেকে ৯৬ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার, এবং হেডগিয়ার থেকে ৭ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। রপ্তানিকারকরা জানান, পণ্যের গুণগত মান, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা, টেকসই উৎপাদন, সময়মতো সরবরাহ এবং পণ্য বৈচিত্র্য বৃদ্ধির কারণে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সম্ভাবনাময়। বিদ্যমান শক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং নতুন খাতের অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই বাজারে ও তার বাইরেও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে, বলেছেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী করতে বাংলাদেশকে উচ্চমূল্যের খাত যেমন ওষুধ শিল্প, আইসিটি সেবা ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানির দিকে নজর দিতে হবে। আমস্টারডামে ‘দ্য বেস্ট অব বাংলাদেশ ইন ইউরোপ’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনীও এই বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রদর্শনী আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ। নেদারল্যান্ডসের ক্রেতারা ফ্যাশনপ্রিয় ও আধুনিক পোশাক পছন্দ করেন। তারা মানসম্পন্ন পণ্যে অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী, যা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়িয়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ টেকসই উৎপাদনে দারুণ অগ্রগতি করেছে। ফলে ক্রেতারা বাংলাদেশি পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ নেদারল্যান্ডসের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে, যা রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। এছাড়া, প্রদর্শনীর মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা নতুন ক্রেতাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভালো পরিমাণ অর্ডার পেয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি পরিধি বিস্তৃত করতে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমানো জরুরি। বিকল্প হিসেবে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে চামড়া শিল্প। তবে এই খাতের উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরিবেশ ও শ্রম সংক্রান্ত শৃঙ্খলা আনতে হবে। ড. জাহিদ হোসেন আরও উল্লেখ করেন, তৈরি পোশাকের বাইরে বৈচিত্র্যময় রপ্তানি খাতে প্রবেশ এবং মানসম্পন্ন পণ্য বিক্রির দিকে নজর দিলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসে। এখন সময় এসেছে, বাংলাদেশকে ভলিউমভিত্তিক রপ্তানি থেকে মান, মূল্য ও বৈচিত্র্য ভিত্তিক রপ্তানির দিকে এগোতে হবে।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি প্রবণতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি সম্ভাবনাময় দিক নির্দেশ করছে। বিদ্যমান শক্তি ও নতুন খাতের অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই বাজারে ও তার বাইরেও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

