চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে নিলামযোগ্য কনটেইনার কমানো যাচ্ছে না। নিয়মিত নিলাম ও ধ্বংস কাজ চললেও উল্টো প্রতিদিনই বাড়ছে নিষ্পত্তিযোগ্য কনটেইনারের সংখ্যা। এই পরিস্থিতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য নিয়মিত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল (রবিবার) পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে জমা থাকা কনটেইনারের ২৫ শতাংশ নিলামযোগ্য। এটি বন্দরের মোট ধারণ ক্ষমতার প্রায় ২০ শতাংশ জায়গা দখল করে রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে নিলাম না হওয়া বা ধীরগতির কারণে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ইয়ার্ড খালি করা যাচ্ছে না। এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অথচ এই ২০ শতাংশ জায়গায় নতুন কনটেইনার রাখা গেলে কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত হতো।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার পর্যন্ত ইয়ার্ডে জমা নিলামযোগ্য কনটেইনারের সংখ্যা ১০ হাজার ৩৩৪ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান)। বন্দরের মোট ধারণ ক্ষমতা ৫৯ হাজার টিইইউএস, যার মধ্যে ৪২ হাজার ১৮৪ টিইইউএস কনটেইনার ইয়ার্ডে জমা আছে। এই নিলামযোগ্য কনটেইনারে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। সঠিক সময়ে নিলাম করা হলে সরকার রাজস্ব পেত। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিলামযোগ্য কনটেইনারের কারণে ১৫০ কোটি টাকার বকেয়া ভাড়া আটকে রয়েছে। দ্রুত নিলাম হলে কনটেইনার জট কমে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হতো। এছাড়া আমদানি-রপ্তানির কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ এনামুল করিম বলেন, “১০ হাজার ৩৩৪ টিইইউএস নিলামযোগ্য কনটেইনার পড়ে আছে। কাস্টম হাউসকে বারবার তাগাদা দিচ্ছি দ্রুত নিলামের জন্য। ধ্বংসযোগ্য কনটেইনার দ্রুত সরানোর জন্যও বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যত কোনো কাজ হয়নি। নিলাম ধীরগতির কারণে বন্দর সমস্যার মুখে পড়েছে।”
চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিডার (নিলামকারী) মোহাম্মদ ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, “নিলাম দ্রুত হলে সবার লাভ। সরকার রাজস্ব পাবে, আমরা লাভ পাব। ধীরগতির কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আপেল, কমলা, আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে নিলাম করলে এই ক্ষতি এড়ানো যেত।”
কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার নিলাম মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, “কোনো পণ্য চালান বন্দরে আসার ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না করলে তা নিলামযোগ্য হিসেবে গণ্য হয়। আমদানিকারকরা চাইলে সময় বাড়াতে পারেন। নিলামের ক্ষেত্রে নিলাম মূল্যের ৬০ শতাংশ পূরণ না হলে পণ্য ছাড় দেওয়া যায় না। অনেক সময় আমদানিকারকের মামলা নিলামে বাধা সৃষ্টি করে।” তিনি আরও জানান, আগামী সপ্তাহে ১৫০টি কনটেইনারে প্রায় ২৫০ টিইইউএস পণ্য নিলামে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কাপড়, সুতা, মেশিনারি ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বিপজ্জনক ১৯ কনটেইনারে প্রায় ৩০ টিইইউএস পণ্য ধ্বংস করা হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, “দেশের উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হবে। ২০ বছরের পুরোনো কনটেইনারও বন্দরে পড়ে রয়েছে। দ্রুত এসব কনটেইনার নিষ্পত্তি করা জরুরি।”
বাংলাদেশ শিপিং অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, “১০ হাজারের বেশি নিলাম কনটেইনার ইয়ার্ড দখল করে রেখেছে। বিশ্বের কোনো বন্দরে এমন হয় না। চট্টগ্রাম বন্দরে ডেলিভারির কারণে চাপ বেড়ে যায়। বেসরকারি ডিপো ব্যবহার বাড়াতে হবে। দ্রুত নিলাম বা ধ্বংস না হলে সমস্যা চলতে থাকবে।”

