পণ্য আমদানিতে আগাম ভ্যাট (মূল্য সংযোজন) প্রদান করা হয়। আইন অনুযায়ী, আমদানি পর্যায়ে অতিরিক্ত ভ্যাট দিলে ৯০ দিনের মধ্যে তা ফেরত (রিফান্ড) দিতে হবে, কিন্তু রিফান্ড কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিমাসে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট রিফান্ড খাতে এক হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।
ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্যাট রিফান্ড ব্যবসার মূলধন। এটি আটকে থাকায় ব্যবসায় খরচ বেড়েছে। ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের নির্দেশে রিফান্ড কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারদের আপাতত রিফান্ড না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চলতি অক্টোবরের দ্বিতীয় বুধবার ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কেন রিফান্ড বন্ধ আছে, তা স্পষ্টভাবে বলেননি। তিনি বলেন, চলতি বছরের মধ্যে রিফান্ড কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিফান্ড পাওয়ার জন্য কমিশনারেট অফিসগুলোতে কখনও ‘ঘুস’ দিতে হয়। অনৈতিক এ চর্চা বন্ধ করতে ভ্যাট রিফান্ড অনলাইনভিত্তিক করার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (চলতি দায়িত্ব) মূসক নিরীক্ষা সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানি ছাড়াই রিফান্ড পেতে পারেন, সেজন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এনবিআরের ভ্যাট সফটওয়্যার (আইভাস) ও সরকারি অর্থ পরিশোধ সফটওয়্যার আইবাসের সঙ্গে সমন্বয় পরীক্ষার কাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই এটি লাইভে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রিফান্ড কার্যক্রম চালু হলে ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে হয়রানি ছাড়া রিফান্ড পাবেন। বর্তমানে এনবিআর চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সভায় অংশগ্রহণ করছেন। ২৯ অক্টোবর দেশে ফেরার পর অনলাইন রিফান্ড কার্যক্রম উদ্বোধন হতে পারে। কিছু সংশ্লিষ্ট বলছেন, সরকারের কোষাগারে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার কারণে রিফান্ড বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে একজন কমিশনার বলেন, এটি সরকারের জন্য বড় অর্থ নয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ৭১১টি আবেদন থেকে ব্যবসায়ীরা এক হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার রিফান্ড দাবি করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা (উত্তর) জোনে ১৬৩টি আবেদন থেকে ৩৪০ কোটি, ঢাকা (দক্ষিণ) ১৬৫টি আবেদন থেকে ২০৭ কোটি, ঢাকা (পূর্ব) ৪২টি আবেদন থেকে ২৪৯ কোটি, এবং ঢাকা (পশ্চিম) ৬৭টি আবেদন থেকে ৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।
এক ব্যবসায়িক সূত্র জানায়, কোনো প্রতিষ্ঠানের ৫০ হাজার টাকার বেশি ভ্যাট রিফান্ড হলে সেটি ম্যাচিউরড হতে ছয় মাস লাগে। অর্থাৎ ছয় মাস পরই ব্যবসায়ী রিফান্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। তাই চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমা পড়া রিফান্ডের আবেদনগুলো কমপক্ষে ৯ মাস ধরে আটকে রয়েছে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়েছে। বন্দরের চার্জও বেড়েছে। রিফান্ড আটকে থাকায় মূলধন কমছে। ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে পণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়ছে।
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, রিফান্ড বন্ধ থাকায় ব্যবসায় খরচ বেড়েছে। পুরোনো আইনে রিফান্ড পাওয়া কঠিন ছিল। নতুন আইনে সহজ হলেও যদি তা কার্যকর না হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাচ্ছেন না। রিফান্ড দেওয়ার বিষয়টি দ্রুত সুরাহা না হলে ব্যবসায়ীদের আস্থার সংকট হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীরা রিফান্ড না পেলে খরচ বাড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়াবেন। আবার আগাম ভ্যাট না দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে সরকারের রাজস্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

