বাংলাদেশের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের জন্য হাইকোর্টে শুনানি চলছে। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এক ধরণের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করার অভিযোগ ওঠে।
পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে। যা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী দলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন যে, এই সংশোধনী দেশের মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করেছে।
এই শুনানি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে একটি বড় আইনি যুদ্ধের সূচনা হতে পারে। শিশির মনিরের মতে, পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনসাধারণ, রাজনৈতিক দল, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ সকলের মতামতের ভিত্তিতে প্রবর্তিত হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা তা ধ্বংস করা হয়েছে, যা সংবিধানকে ধ্বংস করার সমান।’’
এই রিটটি দাখিল করেছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চার আবেদনকারী হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবায়রুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান। শুনানিতে তাদের সমর্থনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণফোরাম এবং বিশিষ্ট আইনজীবী মোস্তফা আসগর শরিফীও যুক্ত হয়েছেন।
শিশির মনির অভিযোগ করেন যে, ৭০ অনুচ্ছেদ দেশের বাকস্বাধীনতা খর্ব করে এবং এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। জামায়াতে ইসলামী তার বক্তব্যে ঘোষণা করেছে যে, ‘‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী জামায়াত জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়। তারা চাইবে যে, জনগণ যাকে ভোট দিবে তিনি সরকার গঠন করবেন।’’
এদিনের শুনানির পর আদালত পঞ্চদশ সংশোধনী বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত জানাবে এবং বিষয়টি দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষা নিয়ে বৃহত্তর আইনি বিতর্ক তৈরি করবে। পরবর্তী শুনানি আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে আইনজীবীরা আশাবাদী যে, আদালত গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
পরিশেষে বলা যায়- পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে চলমান আইনি লড়াই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে। এটি শুধুমাত্র আইনগত বিষয় নয় বরং দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে।