পার্থিব জগতে অসুস্থ -সুস্থ সবারই পরামর্শের আশার ভরসা স্থল চিকিৎসক। আর এই চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিয়ে সব সময় একটি বড় অংশ বঞ্চিত থাকে। দলবাজ, সুযোগসন্ধানী, সুবিধাভোগী, তদবিরবাজরা সিংহভাগ পদোন্নতি পেয়ে থাকেন।
বিগত পতিত সরকারের আমলে দলবাজ, লাইনবাজ ও তদবিরবাজ, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ পদোন্নতি পেয়েছেন। আর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্যেষ্ঠতাসম্পন্ন সিনিয়র চিকিৎসক পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
একশ্রেণির চিকিৎসক মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে পদোন্নতি ভাগিয়ে নিয়েছেন, এমনি অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকরা। স্বনামধন্য সিনিয়র ৪ শতাধিক চিকিৎসক পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তাদের অনেকের চাকরির বয়স মাত্র দেড় থেকে ২ বছর রয়েছে। এসব চিকিৎসক চরম বৈষম্যের শিকার।
চিকিৎসকরা জানান, গত করোনা মহামারিকালে জীবন বাজি রেখে বিরামহীনভাবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। বেশ কিছুসংখ্যক ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জীবন বাজি রেখে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা তারা দিয়ে গেছেন। বিগত সরকার ঘোষিত প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও কিছু দিয়ে বেশির ভাগ প্রণোদনার টাকা তারা পাননি।
ঐ সময় হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী ছাড়াও অন্যান্য সার্ভিসে কিংবা বিভিন্ন ক্যাডারের প্রায় সবাই প্রণোদনা পেয়েছেন। এই নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রণোদনার বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। অন্যদিকে অনেক সিনিয়র চিকিৎসক, যাদের পদোন্নতি পাওয়ার সময় শেষ পর্যায়, তারাও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। বর্তমানে করোনা ও ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব চলছে দেশব্যাপী।
চিকিৎসকরা বঞ্চিত থাকার পাশাপাশি বিগত করোনার পূর্ণাঙ্গ প্রণোদনা না পাওয়া চলতি বছরের করোনা ও ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে সিনিয়র ৪ শতাধিক চিকিৎসকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকারী এক আমলার স্ত্রীর পদোন্নতি পাওয়ার সময় হয়নি। কিন্তু তাকে নানা কায়দায় পদোন্নতি দেওয়ার জন্য ৪ শতাধিক সিনিয়র চিকিৎসকদের পদোন্নতি আটকে গেছে বলে কয়েক জন সিনিয়র চিকিৎসক অভিযোগ করেন।
চিকিৎসকরা আশা করেছেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ন্যয়বিচার পাবেন। কিন্তু কতিপয় আমলার কারণে তাদের পদোন্নতি বাঁধা প্রাপ্ত হয়। ঐ সময় বঞ্চিত ডাক্তাররা দেশব্যাপী কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করেন।
তিনি ১২ সপ্তাহের মধ্যে সবার পদোন্নতির আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পদোন্নতি নিয়ে আলোচনা করে চিকিৎসকদের দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বৈষম্যের শিকার, পদোন্নতিবঞ্চিত চিকিৎসকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান করা হবে। সুবিধাভোগী কতিপয় কর্মকর্তার ষড়যন্ত্র কিংবা বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য যাতে চিকিৎসকরা আন্দোলনে যান।
এই কারণে চিকিৎসকদের পদোন্নতি প্রদানের বিষয়টি নিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিলম্ব করছেন বলে চিকিৎসকদের অভিযোগ। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমানের প্রতিশ্রুতির ১২ সপ্তাহ সময় ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা বলেন, ‘আমরা আরো কিছুদিন দেখব, তার পরও যদি পদোন্নতি দেওয়া না হয় তারা আন্দোলনে যাবে।’ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে চিকিৎসকরা জানান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিয়ে কার্যক্রম চলমান। কত সময় লাগবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।