কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মো. সাইদুর রহমান সিদ্দিকী ২৭ জুন ২০২৫ এক ব্যতিক্রমী ও গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৭/৩০ ধারায় দায়ের হওয়া সি পি মামলা নম্বর ০১/২০২৫ এর প্রেক্ষিতে আদালত কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে বিচারক স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন—তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেলে ফৌজদারি কার্যবিধির ২০২(২) ধারা অনুযায়ী আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
আদেশে বলা হয়, সি আর বা সি পি মামলায় আদালত তদন্তের নির্দেশ দিলে তা জি আর মামলার তদন্তের মতোই বিবেচিত হয়। অর্থাৎ, তদন্তকারী কর্মকর্তা জব্দ, তল্লাশি, সাক্ষ্যগ্রহণ এবং প্রয়োজনে আসামিকে গ্রেপ্তারের মতো পদক্ষেপ গ্রহণে সম্পূর্ণ আইনগত ক্ষমতা রাখেন।
আদালতের এই আদেশ ৬ ডিএলআর (পৃষ্ঠা ২০৫) রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উক্ত রায়ে বলা হয়েছে— If the Court sends the petition of complaint to the police for investigation under section 156(3), the police shall investigate the same as if it was a regular FIR under section 154, CrPC. অর্থাৎ, আদালতের আদেশে পুলিশ ঠিক একটি এফআইআরের মতোই তদন্ত করতে পারে। এতে আসামি গ্রেপ্তারের সুযোগও থাকে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ১৮ ও ২৫ ধারা অনুযায়ী যেখানে আলাদা বিধান নেই, সেখানে CrPC সম্পূর্ণভাবে প্রযোজ্য। পাশাপাশি, পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (PRB)-এর ২৫৫ থেকে ২৮৯ ধারাও তদন্ত কর্মকর্তাকে কার্যকর ভূমিকা পালনে সহায়তা করে। প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে—সি আর বা সি পি মামলায় তদন্ত চলাকালীন আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায় না। এই আদেশ সেই বিভ্রান্তি দূর করেছে। আদালত স্পষ্ট করেছেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে আসামি গ্রেপ্তার করা আইনত বৈধ এবং প্রয়োজনীয়।
তদন্তকালীন সময়ে আসামিকে গ্রেপ্তার না করলে তার পলায়ন, ভিকটিম বা সাক্ষীর ওপর প্রভাব বিস্তার, প্রমাণ নষ্ট করা কিংবা বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যা ন্যায়বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এই আদেশ শুধু একটি মামলার জন্য নয়, বরং এটি বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। এতে প্রতীয়মান হয়—আদালত চাইলে সি আর বা সি পি মামলায় তদন্ত পরিচালনার পাশাপাশি গ্রেপ্তারেরও নির্দেশ দিতে পারেন। ফলে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথ সুগম হয়।
বিচারক মো. সাইদুর রহমান সিদ্দিকীর এই আইনি দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশযোগ্য। আশা করা যায়, দেশের অন্যান্য আদালতও এই আদর্শ অনুসরণ করে বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর, ভিকটিম-ভিত্তিক ও সময়োপযোগী করে তুলবেন।