ইসরায়েলসহ শত্রু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ বা সহযোগিতাকেই ‘বিশ্বে দুর্নীতির’ শামিল বলে অভিহিত করে কঠোর আইন পাস করেছে ইরান। মঙ্গলবার দেশটির সংসদে অনুমোদিত এই আইনে বলা হয়েছে, এসব অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। সূত্র: ইরানওয়ার
নতুন এই আইন অনুসারে, শুধুমাত্র ইসরায়েলের সঙ্গে নয়- যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শত্রু দেশের সঙ্গে সামরিক, গোয়েন্দা বা প্রযুক্তিগত যোগাযোগও একইভাবে প্রাণদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
আইনে ইসরায়েলের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কেউ যদি দখলদার ইসরায়েলকে সামরিক, অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিগতভাবে সহায়তা করে, তবে তাকে সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হবে। এ ধরনের সাহায্যকারীকে ‘ইরানের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আইনটিতে বহুল ব্যবহৃত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক-এর ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই প্রযুক্তি ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় কিংবা সংরক্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
- স্টারলিংক বা অননুমোদিত ইন্টারনেট সেবার সরঞ্জাম কিনলে বা রাখলে: ৬ মাস থেকে ২ বছর কারাদণ্ড।
- যদি কেউ এসব যন্ত্রাংশ ১০টির বেশি আমদানি বা তৈরি করে: ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড।
আইন অনুযায়ী, কেউ যদি শত্রু দেশের হয়ে সামরিক ড্রোন তৈরি করে, সাইবার হামলায় অংশ নেয় অথবা ইরানের অবকাঠামোয় নাশকতার চেষ্টা করে, এমনকি শুধুমাত্র এ ধরনের প্রচেষ্টা চালালেও- তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
- কেউ যদি বিদেশি গণমাধ্যমে ছবি বা ভিডিও পাঠায় এবং তা ইরানি জনগণের মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে ২ থেকে ৫ বছর কারাদণ্ড।
- যদি কেউ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে বা এমন কনটেন্ট তৈরি করে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তবে তার ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
কেন এই আইন?
বিশ্লেষকদের মতে, এই আইন ইসরায়েল-ইরান চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটেই এসেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বারবার ইসরায়েলকে ‘অবৈধ রাষ্ট্র’ বলে আখ্যায়িত করে আসছেন। সম্প্রতি গাজা পরিস্থিতি ঘিরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বে নতুন করে ক্ষোভ দানা বাঁধে, যার প্রতিফলন ঘটেছে ইরানের এই নতুন আইনে।
একইসঙ্গে ইরান দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রবাহ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিদেশি প্রযুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।
নতুন আইনটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে ‘চরম দমনমূলক আইন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলছে, এতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। তবে ইরান বলছে, এই আইন দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।