অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে—“জমি ১২ বছর ধরে অন্য কেউ দখল করলে সেটি তার হয়ে যায়।” বাস্তবে তা সঠিক নয়। আপনি যদি জমি কিনে থাকেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকেন, এবং সমস্ত কাগজপত্র আপ-টু-ডেট থাকে, তাহলে দখলের জন্য আইন আপনাকে সুরক্ষা দেয়।
যদি কেউ আপনার জমি জবর দখল করে বা আংশিক দখল করে, তাহলে কী করবেন?
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ধারা ৯ বলে—“স্থাবর সম্পত্তি থেকে কেউ অন্যায়ভাবে দখলচ্যুত হলে তিনি বা তার মাধ্যমে দাবিদার মামলার মাধ্যমে দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন।” ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ১৪৫(৬) অনুযায়ী, আইনসঙ্গত উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত দখলদার দখল বজায় রাখবে। অর্থাৎ, দখল সবসময় বৈধ স্বত্ব অনুসরণ করে।
উচ্চ আদালতের রায়েও বলা হয়েছে—“অসল বা প্রকৃত মালিকের বৈধ স্বত্ব থাকলে, দখল করলেই বিরুদ্ধ দখল তৈরি হয় না।” (২০ বিএলডি (হাইকোর্ট) ৪০৭) অর্থাৎ জবর দখল কখনো বৈধ হবে না, ১২ বা ১০০ বছর হলেও। উদাহরণ হিসেবে, বৈধ দলিল ছাড়া কেউ ১২ বা ২০ বছর দখল করলেও জমির মালিকানা পরিবর্তিত হবে না।
বেদখল হলে প্রতিকার:
আপনি জমি থেকে বেদখল হলে ফৌজদারি ও দেওয়ানি দুই আদালতে মামলা করতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪ বা ১৪৫ ধারা অনুযায়ী, দুই মাসের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করলে দখলদারের প্রবেশ রোধ বা উচ্ছেদ আদেশ পাওয়া যায়।
এ ধরনের মামলা সাধারণত দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। ম্যাজিস্ট্রেট উভয় পক্ষের বক্তব্য ও প্রমাণ পরীক্ষা করে প্রকৃত দখলদার নির্ধারণ করবেন। সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে এসিল্যান্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ আদেশ জারি হয়। দীর্ঘ সময়ের দখল হলে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ধারা ৮ অনুযায়ী দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যায়। সেখানে আপনাকে বৈধ স্বত্ব প্রমাণ করতে হবে। বেদখল হওয়ার পর ১২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। কোর্ট ফি জমা দিয়ে জমির মূল্যের অনুপাতে মামলা করা হয়।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন অনুযায়ী:
এই আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বৈধ মালিক সরাসরি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন পেলে ম্যাজিস্ট্রেট অপর পক্ষকে নোটিশ দেবেন। প্রয়োজনে সরেজমিন তদন্ত বা সার্ভেয়ারের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। যাচাই শেষে যথাযথ আদেশ জারি করা হবে। জরুরি হলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দখলদার উচ্ছেদ করা সম্ভব। আদেশ অমান্য করলে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ভবিষ্যতের জন্য বন্ড বা মুচলেকা নেওয়ারও সুযোগ আছে। অভিযোগ সাধারণত ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়।
যদি জমি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয় এবং বণ্টন বা দেওয়ানী মামলা চলমান থাকে, তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দেওয়ানী আদালতে বিচারকের নজর আকার্ষণ করে মোবাইল কোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।
লেখক: অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক,অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।