পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৪ জন কর্মরত এবং ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ এবং র্যাবের দুইজন সাবেক মহাপরিচালক। আদালত আগামী ২২শে অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, ফৌজদারি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এত বড়সংখ্যক কর্মরত ও সাবেক সেনা কর্মকর্তার অভিযুক্ত হওয়া বিরল ঘটনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৩০ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৪ জন এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত।
এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সামরিক বাহিনীর সদস্য বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ হলে তার বিচার কোন আইনে হবে। সামরিক আদালত নাকি প্রচলিত ফৌজদারি আইনে বিচার হবে—এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গত ৬ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনে। সংশোধনী অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি চাকরিজীবী হলে আদালতে অভিযুক্ত হওয়ার পর তিনি ওই পদে থাকতে পারবেন না। সেনা কর্মকর্তাদের বিচার বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর এই মুহূর্তে “মন্তব্য নেই” জানিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এর আগে এমন উদাহরণ রয়েছে। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় তিনজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তারা তখন র্যাবের অধীনস্ত ছিলেন। তখন তাদের সেনা বাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয় এবং বিচার প্রচলিত ফৌজদারি আইনে সম্পন্ন হয়।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “সেনাবাহিনীর সদস্য পেশাগত কাজে কোনো অপরাধ করলে তার বিচার সামরিক আইনে হবে কিন্তু সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ করলে সাধারণ আদালতেও বিচার হতে পারে। ইতিপূর্বে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে।”
আইনজীবীরা মনে করেন, সেনা সদস্য বা কর্মকর্তাদের বিচার কোন আইনে হবে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীমের মতে, সংবিধান ও ট্রাইব্যুনাল আইনের আওতায় সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ট্রাইব্যুনালে করতে কোনো বাধা নেই।