আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ফেসবুকে বা সংবাদপত্রে অপমানিত বা কুৎসার শিকার হয়ে থাকেন, কোন ভিন্তা নেই, আইনের সাহায্যে আপনি নিজের সুরক্ষা করতে পারেন। মানহানিকারীকে শাস্তি দেওয়া বা ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব।
মানহানির অভিযোগে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় ধরনের মামলা করা যায়। দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৫০০, ৫০১ ও ৫০২ ধারায় মানহানির সংজ্ঞা ও শাস্তির ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। ফৌজদারি আদালতে মামলা করলে আদালত আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারে। সমন অনুযায়ী যদি কেউ হাজির না হন, বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
দণ্ডবিধি ৪৯৯ এর সংজ্ঞা: যে ব্যক্তি অন্য কারও খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শব্দ, চিহ্ন বা দৃশ্য ব্যবহার করে কুৎসা রটায়, তাকে মানহানিকর ধরা হবে। মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও অভিযোগ আনা যাবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন মানহানির মামলা করতে পারবেন। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে:
- জনগণের কল্যাণে সত্য দোষারোপ করলে মানহানি হবে না।
- সরকারি কর্মকর্তার সরকারি আচরণ নিয়ে সৎ অভিমত প্রকাশ করলে মানহানি হবে না।
- সরকারি বিষয়ে প্রশ্ন বা মত প্রকাশ মানহানি নয়।
- আদালতের কার্যবিবরণী প্রকাশ করলে মানহানি নয়।
- জনসমস্যা বা ব্যক্তির আচরণ নিয়ে সৎ অভিমত মানহানি নয়।
- আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীর বিষয়ে মত প্রকাশ মানহানি নয়।
- জনসম্মেলন বা অনুষ্ঠান সম্পর্কে মত প্রকাশ মানহানি নয়।
- কর্তৃপক্ষের কাছে সৎভাবে অভিযোগ করা মানহানি নয়।
- নিজের বা অন্যের স্বার্থে দোষারোপ মানহানি নয়।
- জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা প্রদানে কিছু বলা মানহানি নয়।
শাস্তি: দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় বলা হয়েছে, মানহানির অপরাধে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় হতে পারে। ৫০১ ও ৫০২ ধারায় প্রিন্ট বা খোদাই করা মানহানিকর বক্তব্যের শাস্তি বর্ণিত।
কে মামলা করতে পারবে এবং কোথায়: ফৌজদারী কার্যবিধি ১৯৮ ধারা অনুযায়ী, মানহানি মামলাটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। যদি ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা হয়, তবে আদালতের অনুমতিতে অন্য কেউ মামলা করতে পারবে, যদি মহিলা জনসমক্ষে হাজির হতে অসমর্থ হন। মেয়েদের ক্ষেত্রে, বাবা বা মা মামলা করতে পারবেন যদি কন্যার প্রতি কুৎসা রটনা করা হয়।
দেওয়ানী আদালতে মামলা করলে ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব। মানহানিকর উক্তির ক্ষতির মূল্য অর্থ দ্বারা মাপা যায় না, তবে বাদী বিভিন্ন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য মামলার আর্জি দিলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। কোর্ট ফি দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে মামলার মূল্যমানের ওপর নির্ভর করে।

