বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শফিক বিন আব্দুল্লাহর পুনঃনিয়োগ আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত একটি তদন্তে ব্যাংকটির নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকটির চেয়ারম্যানকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানায়, এমডির মেয়াদ শেষ হলে আইন অনুযায়ী একটি যোগ্য কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব নিতে হবে। এই চিঠিতে বলা হয়, যদি একই পদে একাধিক কর্মকর্তা থাকেন, তবে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত পদে নিয়োগ করা হবে।
এদিকে, শফিক বিন আব্দুল্লাহর নিয়োগের মেয়াদ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। পুনঃনিয়োগের জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছেন। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায় যে, তিনি ব্যাংকটিতে গুরুতর অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁর পুনঃনিয়োগের প্রস্তাবটি আটকে দিয়েছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও এমডির পুনঃনিয়োগের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকটির একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত এমডির পদে বসার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। কিন্তু শফিক বিন আব্দুল্লাহ তার পছন্দের একজন কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অনিয়মের বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে।
মোহাম্মদ শফিক বিন আব্দুল্লাহ ২০১৪ সালে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্তে ব্যাংকটিতে নানা অনিয়মের সন্ধান পায় এবং সতর্ক করে দেয়। তবুও, ব্যাংকটিতে অনিয়ম অব্যাহত থাকে, যার মধ্যে ১৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। বর্তমানে ব্যাংকের মোট ঋণের ৮৭ শতাংশই খেলাপি অবস্থায় রয়েছে, যা ব্যাংকটির আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করছে।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে না। ব্যাংকটি সরকারি বিল বা বন্ড বন্ধক দেওয়ার সুযোগ হারিয়েছে, যার কারণে তাদের আর্থিক সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের অর্থের জোগান দিয়ে ব্যাংকটির তারল্য সংকট সমাধানের নির্দেশ দিয়েছে কিন্তু আইনগত জটিলতার কারণে এই উদ্যোগও বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
২০০৭ সালে ব্যাংকটিতে জালিয়াতির অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে। সেই সময় ৭০০ কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এরপর নতুন শেয়ার সৃষ্টি করে মালয়েশিয়ান কোম্পানি আইসিবি ইনকরপোরেট গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রি করা হয়। কিন্তু আইসিবি ইনকরপোরেটের বিরুদ্ধে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে মামলা করার ফলে ব্যাংকটির মূলধন জোগানের কার্যক্রম থমকে যায়।
বর্তমানে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতিতে জর্জরিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।