বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ সুরক্ষা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় সারাদেশের রেলওয়ের জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তাদের আগামী ১০ ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে স্বেচ্ছায় স্থাপনা অপসারণ করতে হবে। এই সময়সীমা পার হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
রেলওয়ের জমির বর্তমান পরিস্থিতি-
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮২১ একর। এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৭২৭ দশমিক ৫০৮ একর জমি এখনো অবৈধভাবে দখলে রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, পাকশি বিভাগে অবৈধ দখল সবচেয়ে বেশি। যা ৫ হাজার ৩৫ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ে ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৪৬৮ একর জমি উদ্ধার করেছে।
নীতিমালা ও দখল উচ্ছেদের কার্যক্রম-
রেলওয়ের জমি ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০’। নীতিমালার ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, রেলওয়ে জমির সীমানা রক্ষা ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে মহাব্যবস্থাপককে আলাদাভাবে সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রদান করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।
নীতিমালার ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রতিটি অঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে মাসিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি এবং উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করবেন। রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন এ কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
অগ্রগতির পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা-
উচ্ছেদ কার্যক্রমের অগ্রগতি মাসিক ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তারা তাদের প্রতিবেদনে অগ্রগতি ও সুপারিশ সংযোজন করে তা প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার মাধ্যমে মহাপরিচালকের কাছে পাঠাবেন। মহাপরিচালকের প্রতিবেদন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট উপস্থাপন করা হবে, যাতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
সরকারি অবস্থান-
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (আইন-১) মো. আলী আকবর এক সাক্ষাৎকারে জানান, “আমরা সারাদেশে রেলওয়ের জমি উদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। যারা অবৈধভাবে রেলওয়ের জমি দখল করেছে, তাদের ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থাপনা সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে জমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালিত হবে।”
রেলওয়ের অবৈধ দখলমুক্তকরণ উদ্যোগ শুধু জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই নয় বরং রেলের কার্যক্রমে গতি সঞ্চার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে তা রেলওয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
১০ ডিসেম্বরের সময়সীমা দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান এবং সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে। এবার অবৈধ দখলদারদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রেলওয়ের জমি রক্ষায় এই উদ্যোগ কার্যকর হবে কিনা, সেটি সময়ই বলে দেবে।