ভারতের বিতর্কিত শিল্পপতি অনিল আম্বানির বিরুদ্ধে এবার বড়সড় আর্থিক জালিয়াতির তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। একাধিক প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দিল্লি ও মুম্বাইসহ দেশের ৩৫টি স্থানে তল্লাশি চালায় ইডি। অনিল আম্বানির বড় ভাই হলেন খ্যাতনামা শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, অনিল আম্বানির বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপ ও আর্থিক প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এই তদন্তে ইতিমধ্যে ৫০টিরও বেশি কোম্পানি ও ২৫ জন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ব্যাংক প্রতারণা সংক্রান্ত এই মামলার পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)। ব্যাংকটির সঙ্গে অনিলের একাধিক সংস্থার দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক বিরোধ চলছে। এসবিআই সম্প্রতি অনিল আম্বানি ও তাঁর সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ‘প্রতারক’ বলে কঠোর ভাষায় মন্তব্য করে এবং সিবিআইয়ের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইডির এই অভিযান শুরু হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নভেম্বরে এসবিআই অনিলের সংস্থা রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সকে ‘ফ্রড অ্যাকাউন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যাংকটি সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানালেও পরদিন দিল্লি হাইকোর্ট সেই অভিযোগে স্থগিতাদেশ দেয়।
ইডির দাবি, অনিলের সংস্থাগুলো মূলত একটি সুপরিকল্পিত প্রতারণা চক্র পরিচালনা করছিল। এই চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, লগ্নিকারী সংস্থা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। সংস্থাগুলো বিশাল অঙ্কের ঋণ পেতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তে জানা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বেসরকারি ইয়েস ব্যাংক অনিল আম্বানির ‘রাগা’ গোষ্ঠীর অধীনস্থ একাধিক কোম্পানিকে প্রায় ৩ হাজার কোটি রুপি ঋণ দিয়েছিল। ইডির দাবি, সেই ঋণ ছিল ‘কুইড প্রো কো’ বা পারস্পরিক সুবিধাভিত্তিক চুক্তি, যার ফলে ইয়েস ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ কর্তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন।
অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে যে, অনিলের সংস্থাগুলোর অনেকগুলোর আর্থিক অবস্থান যাচাই না করেই ঋণ প্রদান করা হয়েছে। কিছু সংস্থার কর্ণধার ও ঠিকানা ছিল অভিন্ন, যেগুলোর বিরুদ্ধে সন্দেহজনক শেল কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি ছাড়াই ঋণ মঞ্জুর করা হয়। কখনও পুরোনো ঋণ শোধ করতে নতুন ঋণ নেওয়া হয়েছে।
এই ব্যাপক দুর্নীতির তদন্তে ইডিকে সহায়তা করছে ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি), ন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অথরিটি (এনএফআরএ) ও ব্যাংক অব বরোদা।
সেবির এক প্রতিবেদনে রিলায়েন্স হোম ফিন্যান্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট ঋণ ছিল ৩ হাজার ৭৪২ কোটি রুপি, যা পরবর্তী বছর বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৬৭০ কোটি রুপিতে।

