তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং তার ভাই জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বনি আমিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
বনি আমিনের দাবি, অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা—অস্ট্রেলিয়ান ট্রানজেকশন রিপোর্টস অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টার (AUSTRAC)—এই অর্থ লেনদেন নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি জানান, মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলমের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা জমা হয়, যা ‘কমিশনভিত্তিক হিস্যা’ হিসেবে এসেছে বলে তার অভিযোগ।
বনির ভাষ্য অনুযায়ী, এ অর্থ এসেছে রাষ্ট্রীয় প্রকল্পে তদবির ও ফাইলিংয়ের মাধ্যমে। তার অভিযোগ, মাহফুজ আলম তার প্রভাব খাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অর্থ পাচার করেছেন ভাইয়ের মাধ্যমে।
অভিযোগের পর রাতেই নিজের ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি লেখেন, “গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলা হলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ কেউ তুলতে পারেনি। এটা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর। রাষ্ট্রের দায়িত্ব আমাদের কাছে হাজার কোটি টাকার চেয়েও বড়।”
তিনি দাবি করেন, ‘কয়েকটি মহারথী’ তার ও পরিবারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জলঘোলা হওয়া কিছু বাক্য এডিট করেছেন বলেও জানান তিনি।
তার বক্তব্য, “জুলাই কিছু লোকের কাছে রাজনৈতিক পা রাখার সিঁড়ি। একাধিক দলের মহারথীরা আমাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়। এখন সময় গুজববাজ ও সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।”
তথ্য উপদেষ্টার ভাই মাহবুব আলম মাহিও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার অ্যাকাউন্ট এখনো সচল এবং গত ৬ মাসের ব্যাংক বিবরণী আমি প্রকাশ করেছি।”
তিনি জানান, “আমি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করেছি। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি ২০২৩ সাল থেকে খোলা। আমার বা আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো তদবির বা অবৈধ লেনদেন হয়নি।”
মাহবুব বলেন, “আমার ভাই মাহফুজ আলম কখনো কাউকে তদবির করতে বলেনি। বরং আমাদের পরিবারকে তিনি স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন। গত ৩০ বছর ধরে আমরা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আমার বাবা গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নিপীড়নের কারণে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।”
তিনি আরও বলেন, “গত নভেম্বরে দেশে ফেরার পর কিছু তদবির এলেও মাহফুজ কোনো কাজ করেননি। কেউ আজ পর্যন্ত প্রমাণ দিতে পারেনি, আমরা তদবির বাণিজ্যে জড়িত।”
বনি আমিনের উদ্দেশ্যে মাহবুব আলম বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বনি আমিনকে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

