দীর্ঘ ১১ বছর ধরে চলে আসা ‘ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি’ প্রকল্পটি শেষ মুহূর্তে এসে দাঁড়িয়েছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। এখনো পূর্ণাঙ্গ স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে না উঠলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইছে এই প্রকল্পের ইতি টানতে।
ফলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে—এই প্রকল্পে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে যে ২৮ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তা কি পুরোপুরি অপচয় হয়ে যাবে?
এই প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছিল অটিজম বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষিত শিক্ষকশক্তি। কিন্তু এখন যদি প্রকল্পটি এখানেই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এই প্রশিক্ষণও হবে কাজে না আসা এক ‘বাতিল উদ্যোগ’। পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে চলা অটিজম একাডেমির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হয়ে পড়বে ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত।
শুধু তাই নয়, অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যায় ভোগা শিশুদের মূলধারার শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল, সেটিও মুখ থুবড়ে পড়বে।
২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের প্রাথমিক মেয়াদ ছিল মাত্র দুই বছর। কিন্তু সময় বাড়তে বাড়তে প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকেছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। তিন দফা বাড়ানোর পর প্রকল্প ব্যয়ের অনুমোদন দাঁড়িয়েছে ৭৩০ কোটি টাকার বেশি। অথচ বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ, আর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ১২.৯২ শতাংশ।
সব মিলিয়ে ১১ বছরে খরচ হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে, ৩৫ কোটি টাকা জমি কেনায়, আর বাকিটা ব্যয় হয়েছে সভা-সেমিনার, ক্যাম্পাস ভাড়া, ভর্তি শিক্ষার্থীদের পেছনে ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে।
প্রকল্প শুরুতে মহাখালীতে দুই একর জমি বরাদ্দ পেলেও তা মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় অধিগ্রহণ করা যায়নি। পরে পূর্বাচলে ৩.৩৩ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ, দরপত্র শিডিউলসহ নানা প্রশাসনিক জটিলতায় কাজ এগোয়নি একচুলও।
২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করে প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই এটি বন্ধ করার। এই প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল (৪ আগস্ট) পরিকল্পনা কমিশনের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
অথচ এই প্রকল্প চালু রাখার পক্ষে এখনো অবস্থান করছেন অনেক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। ২৪ অক্টোবর মাউশির তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি লিখে পূর্বাচলের জমিতে সীমিত পরিসরে হলেও নির্মাণকাজ শুরুর অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই উদ্যোগ থমকে গেছে। বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে ফোন ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
গতকাল অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলম জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আগামীকাল সোমবার পরিকল্পনা কমিশনে একটি সভা রয়েছে।”
অতএব প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—প্রকল্পটি কি ভেস্তে যাচ্ছে? আর সেই সঙ্গে ২৮ কোটি টাকার প্রশিক্ষণ ব্যয় কি শুধুই অপচয় হয়ে রইবে?

