অনলাইন উড়োজাহাজ টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এর বিরুদ্ধে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া তিন কর্মকর্তা হলেন—প্রতিষ্ঠানটির হেড অব ফাইন্যান্স সাকিব হোসেন (৩২), চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সাঈদ আহমেদ (৪০) এবং চিফ অপারেটিং অফিসার এ কে এম সাদাত হোসেন (৩২)।
মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন জানান, বিপুল সরকার নামে এক গ্রাহক গতকাল শনিবার (২ আগস্ট) রাতে থানায় মামলা করেন। মামলায় মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি দুই আসামি হলেন—ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন রাশিদ শাহ সাঈম এবং তাঁর বাবা এম এ রাশিদ। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় ১৭টি টিকিট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে, এজেন্সিগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফ্লাইট এক্সপার্ট হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন হাজারো গ্রাহক ও অংশীদার প্রতিষ্ঠান। তারা টিকিট বুকিংয়ের জন্য অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করলেও এখন তা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, মালিকপক্ষ অফিস বন্ধ করে দেশ ছেড়েছেন। এতে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলের ফ্লাইট এক্সপার্ট কার্যালয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগী গ্রাহক ও এজেন্সি প্রতিনিধিরা সেখানে ভিড় করছেন। তাঁদের অনেকেই কেনা টিকিটের ভবিষ্যত কী হবে জানতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। অফিস বন্ধ থাকায় কেউ সঠিক উত্তর পাচ্ছেন না।
২০১৭ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে ফ্লাইট এক্সপার্ট। প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রক্রিয়ার সেবা দিয়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে অনলাইনে সহজ ও কম খরচে টিকিট বুকিংয়ের সুবিধায় তারা আস্থা অর্জন করেছিল। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইট এক্সপার্ট সরাসরি এয়ারলাইনস থেকে নয়, দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কিনত। এখন ওই দুটি এজেন্সি নিজেদের কেনা টিকিট রিফান্ড করে টাকা তুলে নিচ্ছে—এমন অভিযোগ করেছেন অনেক গ্রাহক।
একটি ফেসবুক গ্রুপে ফ্লাইট এক্সপার্টের এমডি সালমান বিন রাশিদের একটি বার্তার স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। হুমকি ও অপবাদ থেকে বাঁচতেই তিনি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিচ্ছেন এবং দেশ ছাড়ছেন। তবে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে এমডি সালমান বিন রাশিদ টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।