গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে নির্মাণ করা হয়েছে তিস্তা সেতু। ৯২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী ২৫ আগস্ট যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা। তবে এর আগেই সেতুটির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর হরিপুর এলাকায় সেতুর খুব কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। নদীতে বসানো হয়েছে খননযন্ত্র (শ্যালো মেশিন)। সেখান থেকে লম্বা পাইপের মাধ্যমে উত্তোলিত বালু ফেলা হচ্ছে সেতুর সংযোগ সড়কের পাশে একটি জমিতে। সংশ্লিষ্ট আইন ভেঙে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে দিনের পর দিন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের সহায়তায়ই একটি চক্র সেতুর কাছ থেকে বালু তুলছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৪(খ) অনুযায়ী, সেতু, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। অথচ তিস্তা সেতুর মাত্র ৩০০ মিটার দূরে থেকে বালু তোলা হচ্ছে নিয়মিত।
জানা গেছে, এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নদীতে ভাসমান বাল্কহেড। তার ওপর রয়েছে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন। নদী থেকে পাইপ বসিয়ে বালু তুলে তা জমা করা হচ্ছে সড়কের পাশেই। শ্রমিকেরা তদারকি করছেন, আবার আশপাশে পাহারায় থাকছেন কয়েকজন।
সাম্প্রতিক এক অভিযানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানা-পুলিশ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় তারা অভিযান না চালিয়েই ফিরে আসেন। এর পর ৫ জুলাই কুড়িগ্রামের চিলমারী ফাঁড়ির নৌ-পুলিশ খননযন্ত্র বন্ধ করতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে আটক করে। কিন্তু ওই সময় সংঘবদ্ধ বালু চক্র পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়।
ঘটনার পর চিলমারী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সেলিম জামান বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এতে নাম উল্লেখ করে ১২ জন ও অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। তবে তারা পরে জামিনে বের হয়ে আবারও বালু উত্তোলন শুরু করে বলে জানান সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাকিম আজাদ।
এলাকাবাসী বলছে, প্রভাবশালীদের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, ‘অনেক দিন ধরেই এখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে। কিছুদিন বন্ধ ছিল, কিন্তু আবার শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সেতু টিকবে না।’
গাইবান্ধা জেলা এলজিইডি অফিস জানায়, ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তিস্তা সেতু প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’। সেতুটি উদ্বোধনের আগেই এর পাশে এমন বালু উত্তোলন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘নদী থেকে কেউ বালু তুলছে না। সরকারিভাবে এলজিইডি বালু তুলতে পারে।’ তবে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী জানান, ‘সেতুর আশপাশ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু তোলা হলে তা সেতুর গঠন ও সংযোগ সড়কের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

