পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নির্মাণাধীন ১৩০০ মিটার সৈকত সড়ক সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আগেই গত ২৯ মে জোয়ারের পানিতে ধসে পড়ে। এতে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
ঘটনার দিনই উপজেলা প্রশাসন সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি সড়কটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এলাকাবাসী মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানায়। পরিদর্শনে আসেন বিভাগীয় কমিশনারও।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়েরের পর তদন্তে নামে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার (১১ জুলাই) দুপুরে কুয়াকাটা ডিসি পার্কসংলগ্ন ধসে যাওয়া সড়কের কাজের মান পরিদর্শন করেন দুদকের পটুয়াখালী জেলার সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন একটি টিম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক খালিদ হোসেন, কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক ও স্থানীয় গণ্যমান্যরা।
তাপস বিশ্বাস জানান, “আমাদের কাছে জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে এসে যা পেয়েছি, তা থেকে পরিষ্কার—এটি একটি অপরিকল্পিত প্রকল্প। প্রকল্পের জন্য ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে, যা কার্যত জলে ভেসে গেছে। শুরু থেকেই একটি টেকসই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা হয়নি।” তিনি আরও জানান, তদন্তের রিপোর্ট কমিশনে জমা দেওয়া হবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজ পেয়েছে তৎকালীন পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগীর প্রতিষ্ঠান—মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স (মালিক ছগির মোল্লা, পৌর শ্রমিকলীগের সদস্যসচিব), মেসার্স আবরার ট্রেডার্স (মালিক বেলাল হোসেন, পৌর শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক) এবং এসএম ট্রেডার্স (মালিক সাদ্দাম মাল, সাবেক পৌর ছাত্রলীগ নেতা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর)। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব প্রতিষ্ঠান ইট ও বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছে। মেয়রের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে সাহস পাননি।
কোটি টাকার প্রকল্প এখন স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজ ও পর্যটকদের কাছে ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যর্থতা’র প্রতীক। পরিকল্পনার অভাব, দায়িত্বহীনতা ও স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন সবাই।

