দেশে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটে চলেছে। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে, যার ফলে ৯ জন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ৭৮।
আগস্টের প্রথম ১০ দিনের ঘটনা যুক্ত করলে মোট নিহত ৮৭ এবং আহত ২৬৬ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান মতে, ২০২৩ সালের শুরু থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ১১১ জন ‘মব’ সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন।
সর্বশেষ ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস নামে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিনে মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনির পর একজনের চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা হয়। নিহত রূপলাল দাসের মা জানিয়েছেন, তার ছেলে চোর নয়, জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের কার্যক্রম দুর্বল হওয়ায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অপরাধের বিচার না হওয়ায় সহিংসতা বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বেড়ে গেলে মানুষও সহিংস হয়ে ওঠে। তিনি বললেন, সাম্প্রতিক সময়ে মব সহিংসতা ও সংঘবদ্ধ মবের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যাদের মাঝে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকে।
অগাস্টের প্রথম ১০ দিনে সংঘটিত ১৩টি গণপিটুনির মধ্যে ৮টিতে চোর সন্দেহে মারধর করা হয়েছে, বাকি ঘটনা চাঁদাবাজি, পূর্বশত্রুতা বা বিরোধের কারণে।
মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, সরকার কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ার কারণেই মব সহিংসতা বন্ধ হচ্ছে না। ব্র্যাক ইনস্টিটিউটের ‘পালস সার্ভে ৩’ অনুসারে, ৮০ শতাংশ মানুষ মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৬ শতাংশ, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬১ শতাংশ এবং পোশাকের কারণে হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬৭ শতাংশ মানুষ।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘মব সন্ত্রাস দমনে পুলিশের নৈতিক অবস্থা দুর্বল ছিল।’ অভ্যুত্থানের দাবিদারদের প্রতি পুলিশ দমন কার্যক্রমে সক্ষম হয়নি।
গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, সরকারের পদক্ষেপ দুর্বল এবং বিভ্রান্তিকর। মব তৈরিতে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতেও মব ভীতি বিরাজ করছে, পুলিশ যথাযথ ভূমিকা নিতে পারছে না।” তাই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য দৃঢ় ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ জরুরি।

