টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রতিবছর সাত হাজারের বেশি জমির নামজারি বা খারিজ হয়। প্রতিটি নামজারিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড কার্যালয়ের এলআর ফান্ডের নামে দুই হাজার টাকা নেওয়া হয়। পাশাপাশি পৌর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কন্টিনজেন্সি খাতের জন্য বছরে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। তবে এসব টাকা যথাযথভাবে খরচ না করে লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মির্জাপুরে ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভাসহ ১২টিতে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয় রয়েছে। এসি ল্যান্ড কার্যালয়ের নাজির মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই অফিসগুলোতে প্রতিবছর সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার জমি নামজারি হয়।
উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি খারিজের সরকারি ফি এক হাজার ১৭০ টাকা। তবে সরকারের ফি ছাড়াও এসি ল্যান্ড অফিসের এলআর ফান্ডের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে অফিসের আনুষঙ্গিক খরচ করা হয়। বাস্তবে এগুলো কন্টিনজেন্সি খাত থেকে খরচ হওয়ার কথা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে। সত্যতা মিললে ডিপার্টমেন্টাল শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা বলেন, ‘ওনাদের (এসি ল্যান্ড) কোনো খরচ নেই। তারা খালি টাকা পান, আমরা দেই।’ অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে আছি, এক টাকাও পাইনি। ওপর থেকে খরচ দিয়ে দেওয়া হয়।’
এলআর ফান্ডে জমা হওয়া অর্থের খরচ বিষয়ে জানতে চাইলে এক ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই টাকা শুধু পকেটে যায়।’ তিনি জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিস এই ফান্ডের কোনো টাকা পায় না। খাতা-কলমসহ অন্যান্য খরচ নামজারি থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ থেকে করা হয়।
বরাদ্দ পাওয়া না হওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এসিআর এসি ল্যান্ড লিখে। তাই অভিযোগ করা সম্ভব নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি এলআর ফান্ডের জন্য দুই হাজার টাকা না দেওয়া লাগে, আমরা নামজারিতে সেই টাকা নিই না।’
মির্জাপুরের এসি ল্যান্ড মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অফিসে কোনো এলআর ফান্ড নেই। কোনো টাকা নেওয়া হয় না। কন্টিনজেন্সি বিলের টাকা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়।’ টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে পরবর্তীতে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

